জুলাই ১, ২০২৪

দীর্ঘ আইনি নাটকীয়তা শেষে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক চুক্তিতে পৌঁছানোর পর কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্য ছেড়েছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। চুক্তি অনুযায়ী তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষ স্বীকার করেন। খবর বিবিসির।

৫২ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মার্কিন জাতীয় প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল। কয়েক বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুক্তি দিয়ে আসছে, উইকিলিকসের ফাঁস করা ফাইলে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এতে বহু জীবন বিপন্ন হয়েছে।

অ্যাসাঞ্জ গত পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের কারাগারে ছিলেন। সেখান থেকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসের তথ্যমতে, যুক্তরাজ্যে কারাবন্দি থাকায় অ্যাসাঞ্জকে এবার মার্কিন কারা হেফাজতে থাকতে হবে না। বিচার বিভাগের একটি চিঠি অনুসারে, অ্যাসাঞ্জ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাবেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইকিলিকস জানিয়েছে, অ্যাসাঞ্জ এক হাজার ৯০১ দিন ছোট একটি প্রকোষ্ঠে বন্দি থাকার পর সোমবার (২৪ জুন) বেলমার্শ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

উইকিলিকসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অ্যাসাঞ্জকে (সোমবার) বিকেলে স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তিনি একটি ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করেন।

অনলাইনে উইকিলিকসের শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, জিন্স ও নীল শার্ট পরা অ্যাসাঞ্জকে স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিবিসি স্বাধীনভাবে ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা এক্স পোস্টে লেখেন, এটিকে বাস্তবে পরিণত করতে যারা বছরের পর বছর ধরে সংগ্রাম করেছেন, সেই সমর্থকদের ধন্যবাদ।

গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে অ্যাসাঞ্জের দোষ স্বীকারের চুক্তিটি আগামীকাল বুধবার (২৬ জুন) উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের একটি আদালতে চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া সরকারের একজন মুখপাত্রের উদ্ধৃত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলাটি খুব দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ও তার আইনজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে এসেছেন, মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, তিনি অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারে অস্ট্রেলিয়ার অনুরোধ বিবেচনা করছেন। মে মাসে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট রায় দেন, অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে নতুন করে আপিল আবেদন করতে পারবেন। এ রায়ের পরে অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা সাংবাদিক ও সমর্থকদের বলেন, বাইডেন প্রশাসনের এই লজ্জাজনক মামলা থেকে নিজেদের দূরে রাখা উচিত।

মার্কিন আইনজীবীরা মূলত উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতাকে ১৮টি মামলায় অভিযুক্ত করতে চেয়েছিলেন, যেগুলোর বেশিরভাগই গুপ্তচরবৃত্তি আইনের আওতায়। এসব মামলায় আফগানিস্তান ও ইরাকের যুদ্ধ সম্পর্কিত গোপনীয় মার্কিন সামরিক তথ্য এবং কূটনৈতিক বার্তা প্রকাশের অভিযোগ আনা হয়।

২০০৬ সালে অ্যাসাঞ্জ প্রতিষ্ঠিত উইকিলিকসের দাবি, এক কোটির বেশি নথি প্রকাশ করেছে তারা। মার্কিন সরকার পরে এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তথ্য প্রকাশের বৃহত্তম ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছে। ২০১০ সালে উইকিলিকসের ওয়েবসাইটে একটি মার্কিন সামরিক হেলিকপ্টার থেকে ধারণ করা ভিডিও প্রকাশ করা হয়, যাতে বাগদাদে রয়টার্সের দুই সংবাদকর্মীসহ বেশ কয়েকজন ইরাকি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করতে দেখা যায়।

এর আগে অ্যাসাঞ্জের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী মার্কিন সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিশ্লেষক চেলসি ম্যানিংকে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অবশ্য তার সাজা কমিয়ে দেন।

অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। সুইডিশ কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে মামলাটি বাতিল করে। পরে যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ তাকে কারা হেফাজতে নেয়। দীর্ঘদিনের আইনি লড়াইয়ে চলাকালে অ্যাসাঞ্জকে খুব কমই জনসমক্ষে দেখা গেছে। ২০২১ সালে কারাগারে তার একটি ছোট স্ট্রোক হয় এবং শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছিল।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *