২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ফ্রিজ, এসি ও মোবাইল ফোনের ওপর ভ্যাট বাড়তে পারে। ভ্যাট বাড়তে পারে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারেও। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আসন্ন বাজেটে ভোক্তাদের জন্য এটি আরেক দুঃসংবাদ হতে পারে।
এ ছাড়া, চিনিযুক্ত কিছু জুসের ওপর ভ্যাটের হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। জুস প্রস্তুতকারকদের বার্ষিক বিক্রি বা টার্নওভারের ওপরেও ন্যূনতম করের হার বাড়তে পারে।
সূত্র বলছে, বর্তমানে রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ। এ হার বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হতে পারে। মূল্য সংযোজনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে মোবাইল ফোনের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটের হার ২ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ। এখানে কিছুটা বাড়তে পারে। মোবাইল ফোনের বিক্রয় পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, যা সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে। এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ, এটা কিছুটা বাড়তে পারে। উৎপাদন পর্যায়ে পুরোপুরি ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে এসি। নতুন বাজেটে এসি উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হতে পারে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত রোববার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে সিপিডির আয়োজনে এক সংলাপে তিনি বলেন, দেশীয় শিল্প বিকাশে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফ্রিজ, এসিসহ বিভিন্ন শিল্পে ভ্যাটে ছাড় রয়েছে। একই সঙ্গে মোবাইল ফোন খাতেও ধারাবাহিকভাবে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এতে এসব পণ্যের বাজার এখন দেশীয় উৎপাদনকারীদের দখলে। ইতোমধ্যে এসব খাত বেশ সক্ষমতা অর্জন করেছে। তাই দেশের স্বার্থে এসব শিল্পে ক্রমান্বয়ে কর আরোপ করা হবে।
তবে ভোক্তা ও শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার যদি মোবাইল ফোন, এলপিজি সিলিন্ডার, ফ্রিজ বা এসির ওপর ভ্যাট বাড়ায়, তাহলে দাম বাড়িয়ে ব্যবসায়ীরা সেই বোঝা ভোক্তার কাঁধেই চাপাবেন। এতে ভোক্তাদের খরচ বাড়বে। দীর্ঘ সময় ধরে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে তা আরও তীব্র করবে।
ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদন-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যে কোনো পর্যায়েই কোনো কর বাড়ানো হলে বাড়তি খরচটা ভোক্তাদের ওপরেই পড়বে। তাদের আর কোনো বিকল্প থাকবে না। ইলেকট্রনিকস পণ্যকে আর বিলাসদ্রব্য হিসেবে গণ্য করা হয় না। তাই কর বাড়ানোরও যুক্তি থাকতে পারে না। বিশেষত, যখন দেশের অর্থনীতির বিবেচনায় বিদ্যমান ভ্যাটের হারই খুব বেশি।
এদিকে ঋণ কর্মসূচির আওতায় করছাড় কমাতে আইএমএফের শর্ত রয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, ২০২৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে তিন ধাপে বিদ্যমান সব ধরনের করছাড় বাতিল করতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে কর জিডিপির অনুপাত ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। এনবিআর মনে করে, এ অবস্থার অন্যতম কারণ করছাড় এবং অব্যাহতি। গত নভেম্বরে প্রকাশিত এনবিআরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ করব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রক্ষেপিত জিডিপি আকার বিবেচনায় নিলে যা বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। ‘প্রত্যক্ষ করব্যয়’ বলতে রেয়াত, ছাড়, অব্যাহতি, কম হারে করারোপ না করলে যে পরিমাণ আয় হতে পারত। এনবিআর এ ধরনের ছাড় আগামী অর্থবছরে কমাতে চায়। ঋণ কর্মসূচির আওতায় করছাড় কমাতে আইএমএফের শর্ত রয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, ২০২৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে তিন ধাপে বিদ্যমান সব ধরনের করছাড় বাতিল করতে হবে।