জ্বলছে বাংলাদেশ। দেশজুড়ে হিংসা। বিপন্ন পড়শি দেশের সংখ্যালঘুরা। ভাঙচুর চলছে সেদেশের মন্দির, গীর্জায়। এই পরিস্থিতিতে নীরবতা ভাঙলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে অশান্তির জন্য তিনি সাফ দায়ী করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে। শেখ হাসিনার অভিযোগ, বেছে বেছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হচ্ছে। এর নেপথ্যে হাত রয়েছে ইউনূসের। এমনকি সে দেশের মন্দির, গির্জা ও ধর্মীয় সংগঠন ইসকনের উপর হামলার জন্যও ইউনূসের নিন্দা করেছেন হাসিনা।
আমেরিকার নিউইয়র্কে আওয়ামি লিগের এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেখানেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক তিনি। বলেন, ‘আজ আমার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে মুহাম্মদ ইউনূসই ছাত্র সমন্বয়কদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে গণহত্যায় লিপ্ত হয়েছেন। তাঁরাই মাস্টারমাইন্ড। এমনকি তারেক রহমান-ও (বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র) লন্ডন থেকে জানিয়েছেন এভাবে যদি মৃত্যু চলতেই থাকে, তাহলে এই সরকার বেশিদিন টিকবে না।’
পাশাপাশি হাসিনার প্রশ্ন, “আজ শিক্ষক, পুলিশ সবার উপর হামলা চালানো হচ্ছে এবং হত্যা করা হচ্ছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের নিশানা করা হচ্ছে। গির্জা ও বেশ কয়েকটি মন্দিরে হামলা হয়েছে। কেন বাংলাদেশে এখন সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হচ্ছে?”
তীব্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসেন শেখ হাসিনা। তারপর নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এর কয়েক দিন পর থেকেই সে দেশে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বেড়েছে বলে অভিযোগ। এরপরও, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইউনূস সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি। শেষে সরকারের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নামে বাংলাদেশেরে সংখ্যালঘু হিন্দুরা।যার নেতৃত্ব ছিলেন হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। কিন্তু তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। জামিনের আবেদন খারিজ হয় তাঁর। পাঠানো হয় জেল হেফাজতে। মঙ্গলবারও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামি খারিজ হয়। আরও একমাস তাঁকে জেলে থাকতে হবে। এ দিন তাঁর হয়ে কোনও আইনজীবী সওয়াল করেননি। চিন্ময় প্রভুর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সরব সেদেশের সংখ্যালঘুরা। মুখর ইস্কন। ফলে নতুন করে অশান্ত বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ করলেন শেখ হাসিনা।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দাবি, তাঁর বাবা তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মতোই তাঁকেও হত্যার পরিকল্পনা ছিল। তবে তিনি ‘গণহত্যা’ চান না বলেই বাংলাদেশ ছেড়েছেন। হাসিনার কথায়, “আমি গণহত্যা চাইনি। আমি যদি ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে চাইতাম, তাহলে গণহত্যা হত। যখন নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, তখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমার পদ ছাড়া উচিত। আমার নিরাপত্তাকর্মীরা যদি গুলি চালাতেন, তাহলে অনেক মানুষ মারা যেত। গণহত্যা আমি চাইনি।”
দেশ ছাড়ার শেষ মুহূর্তের কথা বলতে গিয়ে হাসিনা দাবি করেন যে, একদল সশস্ত্র জনতা তাকে হত্যা করতে গণভবনে এসেছিল।
শেখ হাসিনা আওয়ামি লিগের কর্মীদের বলেন, “আমাদের জাতির পিতার মতোই হত্যার পরিকল্পনা ছিল, যাঁকে ১৫ আগস্ট (১৯৭৫) হত্যা করা হয়েছিল। এটি ছিল ২৫-৩০ মিনিটের ব্যাপার। কিন্তু আমি আমার নিরাপত্তাকে বলেছিলাম গুলি না চালাতে।”