সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪

ছোটবেলায় আমাদের কথা বলা শেখা, হাঁটতে শেখা, চারপাশের সব কিছুর নাম জানা থেকে শুরু করে সব স্টেপই খুব গতানুগতিকভাবেই হয়েছিল। এই বিষয়গুলো শেখার জন্য আমাদের কিন্তু সেভাবে কষ্টের প্রয়োজন হয়নি। তেমনভাবে মুখস্থ করারও দরকার হয়নি।a

তবে পড়ালেখার ক্ষেত্রে এই গতানুগতিক নিয়মটা আর কাজে লাগাতে পারি না আমরা। তখনই আশ্রয় নিতে হয় মুখস্থ বিদ্যার। আর এখানেই আমাদের যত দুর্বলতা। অনেক শিক্ষার্থীই এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পেরে চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েন। পড়ালেখাটাই তখন অসহ্য হয়ে উঠে তাদের কাছে।

মানুষের মস্তিষ্কের দুটি দিক রয়েছে। একটি সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম, অন্যটি পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম। সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের আবার অনেক ভাগ। এর সঙ্গে রয়েছে নানা রকম কাজ। তার একটি হলো মেমোরি বা স্মৃতিশক্তি।

সবার স্মৃতিশক্তি এক নয়। যেসব ছাত্র কোনো একটি নতুন কনসেপ্ট খুব সহজেই উপলব্ধি করতে পারে কিংবা অল্প সময়ে মুখস্থ করতে পারে এবং এটির যথার্থ প্রয়োগ করতে পারে অবশ্যই এটি তাদের জন্য একটি বড় প্লাস পয়েন্ট।

সুতরাং আমাদের মনে অবশ্যই প্রশ্ন জাগতে পারে দ্রুত মুখস্থ করার ক্ষমতা কি শুধু তাদের জন্যই বরাদ্দ, যারা আমাদের মাঝে খুব জিনিয়াস? তা হলে নিশ্চয়ই এটা বিধাতা প্রদত্ত তাদের জন্য উপহারস্বরূপ! তা হলে আমরা কেন শুধু শুধু দাঁতভাঙা টপিক্স নিয়ে মাথা ঘামিয়ে হা-হুতাশ করব?

এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। আমাদের মাঝে যে কেউ চাইলেই খুব দ্রুত কোনো টপিক্স খুব সহজেই মুখস্থ করে নিতে পারি কয়েকটি স্টেপ অনুসরণ করার মাধ্যমেই। চলুন জেনে নিই সহজে মুখস্থ করার ৫টি কৌশল…

১. সম্পূর্ণ অনুচ্ছেদটি বারবার পড়ার ওপর জোর দেওয়া

আমাদের একটি বড্ড বাজে অভ্যাস রয়েছে, আমরা কী পড়লাম তার থেকে কতটুকু সময় পড়েছি তার ওপর বেশি জোর দিই। ধরা যাক— আজ সকালে উঠে আমি একটানা পাঁচ ঘণ্টা পড়েছি; কিন্তু আসলেই কি সম্ভব একটানা পাঁচ ঘণ্টা পড়া? টানা পাঁচ কেন দুই ঘণ্টাই মনোযোগ ধরে রাখা কিন্তু চাট্টিখানি কথা না! একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে পাঁচ ঘণ্টার মাঝে কতবার আমাদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটেছে। হয়তো পড়ার মাঝেই আমাদের ফেসবুকের নোটিফিকেশন চেক করছি, মেইল চেক করছি কিংবা ইউটিউবে ঢুকে বসে আছি। এভাবে ২-৩ ঘণ্টা পড়ার পর ভাবছি আজ না জানি কত বেশি পড়ে ফেললাম। অথচ এই সময়টুকুতে যতটুকু পড়া যেত তা কিন্তু হয়নি।
কোনো টপিক শিখতে কত সময় পড়লাম সেটি কখনই মুখ্য বিষয় নয়, বরং টপিকটি আমি কয়বার ভালোভাবে বুঝে পড়েছি সেটাই মুখ্য বিষয়।

সুতরাং, পড়তে বসার সময় কোনো টপিক মুখস্থ করার জন্য কোনো নির্ধারিত সময় ফিক্সড না করে বরং টপিকটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত লাইন বাই লাইন কয়েকবার পড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। একটা দাঁতভাঙা অনুচ্ছেদ প্রথমবার পুরোটা পড়লে যতটুকু কঠিন মনে হবে দ্বিতীয়বার পড়লে তুলনামূলক কম কঠিন মনে হবে। সুতরাং যতবার পুনরায় পড়া হবে, ততটাই সহজ মনে হবে।

২. অনুচ্ছেদটিকে ভেঙে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে পয়েন্ট আউট করে ফেলা

টপিকটি সম্পূর্ণ লাইন বাই লাইন পড়া হয়ে গেলে যেসব বাক্য দুর্বোধ্য, সেগুলো আন্ডারলাইন করে ফেলতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো বের করে নিয়ে আসতে হবে। একেকটি পয়েন্ট একটি শব্দ কিংবা একটি ছোট বাক্যের সমন্বয়ে তৈরি হতে পারে। পয়েন্ট আউট করাটা অবশ্যই বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে করতে হবে যেন একবার পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই টপিক একটি বিশেষ অংশ মাথায় খেলা শুরু করে। অতঃপর পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করতে হবে।

৩. পয়েন্টগুলোর সমন্বয়ে একটি শেকল তৈরি করা

আমাদের কাছে এখন টপিকটির গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো রয়েছে। এখন খুব সহজেই প্রতিটি পয়েন্ট দেখেই বুঝে ফেলতে পারব কোনটি দিয়ে কী বোঝানো হচ্ছে, যদি অনুচ্ছেদটি ভালোভাবে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া হয়ে থাকে।
প্রতিটি পয়েন্ট মাথায় গেঁথে ফেলতে হবে এবং সুন্দর করে পয়েন্টগুলো ধারাবাহিকভাবে খাতায় টুকে ফেলতে হবে অনেকটা শেকলের মতো। যেন দেখলেই বুঝতে সহজ হয় কোন পয়েন্টটা আগে আসবে আর কোন পয়েন্টটা তারপরে আসবে। এখন সব পয়েন্টের মাধ্যমে খুব সহজেই সম্পূর্ণ অনুচ্ছেদটিকে মাথায় গেঁথে নিতে পারব।

৪. মুখস্থ করার প্রক্রিয়াকে একটি নতুন খেলার মধ্যে আবদ্ধ করা

আমরা সবসময় পড়ালেখা থেকে খেলাধুলাকেই বেশি প্রাধান্য দিই। যদি পড়ালেখাটা কোনো আনন্দদায়ক খেলার মতো হতো তা হলে কিন্তু কয়েকবার সম্পূর্ণ অনুচ্ছেদটি পড়ে ফেলতাম। একজন কবিতাপ্রেমী মানুষ একটি কবিতা বারবার পড়ার পরও বিরক্ত হবেন না কিংবা একজন গানপ্রিয় মানুষ সারা দিন গান শুনলেও কিন্তু বিরক্ত হবেন না। কারণ এগুলোর মাঝে তারা আনন্দ খুঁজে পায়। কিন্তু পড়ালেখার মাঝে এই আনন্দ খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর; তার ওপর যদি হয় দাঁতভাঙা কোনো টপিক তাহলে তো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। উপরের পয়েন্টগুলো সঠিক বাস্তবায়নের জন্য আমরা মুখস্থ করার প্রক্রিয়াকে একটি নতুন খেলার মাঝে নিয়ে আসব। খেলাটি হবে এমন— আমরা কিছু নিয়ম দেব খেলাটির এবং খেলা শেষে নিজেই নিজেকে পুরস্কৃত করব। কোনো কিছু দ্রুত মুখস্থ করার জন্য প্রয়োজন একটি ফ্রেশ মস্তিষ্কের।

ধরি আজকে এই কঠিন টপিকটি মুখস্থ করব এবং তারপর একটি মুভি দেখব কিংবা বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাব। নিয়মটি হবে এমন— আমি যদি মুখস্থ করতে না পারি তাহলে আমি ঘুরতে যাব না। এতটুকু সংকল্প নিজের মাঝে আনতে পারলে সম্পূর্ণ ব্যাপারটি তখন খেলার মতো মনে হবে। আবার খেয়াল করলে দেখা যাবে বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার জন্য আমরা ঠিকই কঠিন টপিকটি খুব সহজেই মুখস্থ করে ফেলছি এবং সময়ও খুব কম লাগছে।

সঠিক নিয়মে পড়াশোনা করে তৈরি করুন আপনার কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট অর্জন করার পথ। আজই এনরোল করে শিখুন পড়াশোনা করার নিয়ম, পড়ালেখা রুটিন তৈরি এবং পড়াশোনা মনে রাখার উপায়।

৫. আমাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ কখন দিতে পারব তা বের করা

বর্তমান প্রজন্ম অনেকটাই রাত জেগে পড়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। কিন্তু গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, রাত জেগে পড়া তুলনামূলক কম কার্যকর। কোনো কিছু দ্রুত মুখস্থ করার জন্য প্রয়োজন একটি ফ্রেশ মস্তিষ্কের।

মস্তিষ্ক সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর সবচেয়ে বেশি ক্লিন থাকে; তখন আমাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার মতো ক্ষমতা তৈরি হয়। বিকালবেলা পড়ালেখাটা এক কথায় অস্বস্তিকর, তার ওপর যদি হয় মুখস্থবিদ্যার প্রয়োগ তাহলে তো মাথা বিগড়ে যাওয়ার কথা।

সুতরাং মুখস্থবিদ্যা প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত সময় নির্ধারণ খুব জরুরি। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে সময়টা এক রকম নাও হতে পারে। অতঃপর পড়া শুরু করার অনেকটুকু সময় পর যখন দেখব মুখস্থ করার কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে, তখন স্বল্প সময়ের একটি ব্রেক দেব, ব্রেকের পর আবার পড়তে বসব। একটানা লম্বা সময় ধরে পড়ার তুলনায় ব্রেক দিয়ে পড়ালেখা বেশি কার্যকর।

ওপরের পাঁচটি ধাপকে অভ্যাসের মাঝে নিয়ে আসতে পারলে খুব সহজেই আমাদের মাঝে মুখস্থবিদ্যার ভয়কে জয় করে পড়ালেখাটাকে উপভোগ্য করে তোলা যাবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *