সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

মিউচজ্যুয়াল ফান্ডের আয়ের প্রধান উৎস শেয়ারবাজার। কিন্তু সেই শেয়ারবাজার মন্দার মধ্যে রয়েছে। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি ব্লু-চিপস কোম্পানির সূচকও কমেছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ প্রদানও কমেছে। এতোসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত সর্বশেষ অর্থবছরের ব্যবসায় ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উপলক্ষে এসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডস (এএএমসিএমএফ) আয়োজিত রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে ‘রোল অব এসডিজি অ্যানালিটিক্স ইন ক্যাপিটাল মার্কেট-বেজড ডেভেলোপমেন্ট ফাইন্যান্সিং’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।

‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আজকের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. মিজানুর রহমান। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন আরেক কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেস গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এএএমসিএমএফ এর সভপাতি ড. হাসান ইমাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের কোঅর্ডিনেটর অ্যান্ড ইকোনোমিস্ট জুবায়ের হোসেন।

অনুষ্ঠানে বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমান বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়নে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। তবে বর্তমানে শেয়ারবাজারে এই খাতের অংশগ্রহণ খুবই কম। যেটা ১৬ হাজার কোটি টাকার মতো। কিন্তু এটা হওয়া উচিত ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। তবে আগামি ১০ বছরে এই খাত অনেক এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া হিসাব মান পরিপালনে কঠোর কমিশন। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা হবে মিউউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি নিরসন করে। যা ব্যক্তিগতভাবে করা কঠিন। এজন্য বিনিয়োগকারীদেরকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করার আহবান করেন তিনি। এসময় তিনি ভালো কোম্পানি বাজারে না আনলে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ভালো করবে না বলে যোগ করেন।

রেস গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এএএমসিএমএফ এর সভপাতি ড. হাসান ইমাম বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড শেয়ারবাজারের সবচেয়ে বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। এই খাতটি অনেক বাঁধা বা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও ভালো করছে। শেয়ারবাজার যেখানে নেতিবাচক, সেখানে এই খাতের উন্নতি হয়েছে।

তিনি বলেন, গত অর্থবছরে শেয়ারবাজার নেতিবাচক ছিল। যেই ব্লু চিপস কোম্পানিতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করা হয়, সেই ব্লু চিপস-৩০ সূচকও নেতিবাচক ছিল। এই অবস্থার মধ্যেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো ২০২২-২৩ অর্থবছরের ব্যবসায় ২৮৩ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এমনকি গত ১০ বছরের মধ্যে ৭ বছরই সূচক বৃদ্ধির তুলনায় মিউচ্যুয়াল ফান্ড ভালো করেছে বলে যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আয়ের প্রধান উৎস বিনিয়োগ করা কোম্পানিগুলো থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ এবং ক্যাপিটাল গেইন। কিন্তু গত অর্থবছরে দুই খাতই ছিল মন্দা।

এরমধ্য দিয়েও লভ্যাংশ দিয়ে অ্যাসেট ম্যানেজজাররা দক্ষতার প্রমাণ রেখেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত ভালো করছে বলে তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর কম নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেন উল্লেখ করে হাসান ইমাম বলেন, এই যে কোন কোন ইউনিট দর ৪-৫ টাকা, এটা কিন্তু অ্যাসেট ম্যানেজারদের পারফরমেন্স না। আপনাকে দেখতে হবে ওই ইউনিটের অ্যাসেট কত আছে। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশে সম্পদের তুলনায় অনেক কমে বা ডিসকাউন্টে ইউনিট লেনদেন হয়। যেটা আমেরিকায় সর্বোচ্চ ২০% হয়।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর ডিভিডেন্ড ইল্ড বা প্রকৃত লভ্যাংশ ১৫-২০%। যা অন্যসব খাতের শেয়ারে সম্ভব না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রেজাউল করিম বলেন, বন্ডের কূপণ রেট থেকে কর অব্যাহতি দেওয়া দরকার। তাহলে ইউনিটহোল্ডাররা ভালো লভ্যাংশ পাবে।

এলআর গ্লোবালের সিআইও রিয়াজ ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনীতি যেবাবে এগিয়েছে, সেভাবে শেয়ারবাজার এগোয়নি। এটা শেয়ারবাজারের জন্য খারাপ খবর। এটা সমাধান করা সম্ভব। যার অনেক সুযোগ রয়েছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *