

বছর না ঘুরতেই আবার বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে বিদ্যুৎ বিভাগ। আগামী মাস (মার্চ) থেকেই এটা কার্যকর হতে পারে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে। এর সঙ্গে ভোক্তা পর্যায়েও কিছুটা সমন্বয় হবে। তবে ভোক্তাদের ওপর খুব বেশি প্রভাব যাতে না পড়ে, সেভাবেই বাড়ানো হবে। যারা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তাঁদেরটা বেশি বাড়বে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ব্যবহার বুঝে নির্ধারিত হয়। মাসে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত, ১০১ থেকে ২০০ ইউনিট, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত এভাবে বিভিন্ন শ্রেণির জন্য আলাদা আলাদা দর থাকে। কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের জন্য প্রতি ইউনিটে ২৫ থেকে ৩০ পয়সা বাড়তে পারে। তবে যাঁরা সর্বোচ্চ ব্যবহারকারী অর্থাৎ মাসে ৬০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহার করেন, তাদের জন্য প্রতি ইউনিটে ৭০ থেকে ৮০ পয়সা বাড়তে পারে।
এর আগে গত বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতি মাসে ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ করে বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। এর মধ্যে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এক দফায় বাড়ে পাইকারি বিদ্যুতের দাম। এ নিয়ে গত দেড় দশকে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও ভোক্তা পর্যায়ে ১৩ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আগে গণশুনানির মাধ্যমে অংশীজনদের মতামত নিয়ে দাম বাড়াত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলটরি কমিশন। গত বছরের জানুয়ারি থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ানো হচ্ছে। নির্বাহী আদেশে সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়, যা ওই বছরের মার্চ থেকে কার্যকর হয়।
গ্রীষ্ম মৌসুম সামনে রেখে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ডলার ও টাকার ঘাটতিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিলও বকেয়া রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
গত বছরের ১৮ জানুয়ারি শিল্পসহ অন্যান্য খাতে গ্যাসের দাম গড়ে ৮০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এ সময় সবচেয়ে বেশি ১৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয় বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম। এখন নতুন করে আবার শুধু বিদ্যুৎ খাতের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১৪ টাকা। প্রতি ইউনিট গ্যাসের পেছনে সরকারের এখন খরচ হচ্ছে গড়ে ২৪ টাকা। এলএনজি আমদানির জন্যই গ্যাসের খরচ বাড়ছে।
জ্বালানি তেলের দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয়ের একটি সূত্র তৈরি করেছে জ্বালানি বিভাগ। এর আওতায় প্রতি মাসে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম সমন্বয় করা হবে। বিশ্ববাজারে বাড়লে দেশে বাড়বে, কমলে দেশে কমবে। এটি গত বছরের সেপ্টেম্বরে চালুর কথা থাকলেও তা করা যায়নি। এটাও মার্চ থেকে চালু হতে পারে।
দেশের অর্থনীতিতে খারাপ সময় কাটাতে ২০২২ সালের মাঝামাঝি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। ওই অনুরোধে সাড়া দিয়ে আইএমএফ ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই ঋণের শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত থেকে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার পরামর্শ দেয় সংস্থাটি।
তবে এ সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হবে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, দাম না বাড়িয়ে বরং দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমানোয় সরকারের নজর দেওয়া উচিত।