ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

অর্থনীতি ও বাজার এই দুই জায়গাতেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি বলেন, এই সিন্ডিকেটের কারনেই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছেন এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মানুষ বাজার করতে গিয়ে এখন কাঁদছে। এই সিন্ডিকেট ধরতে না পারলে এবং ভাঙতে না পারলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের দায়ীত্বে থাকা উচিৎ না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে এসএমই খাতের উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভুমিকা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। কর্মশালাটি ইআরএফ ও এসএমই ফাউন্ডেশন যৌথভাবে আয়োজন করে।

ইআরএফ সাধারন সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় ও এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মাদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ এগিয়ে চলেছে, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু তারপরও দেশে আজকে যে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে, ব্যবসার নামে আজকে যে লুটপাট হচ্ছে, মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে এগুলো সাংবাদিকদের আরো জোরালো ভাবে তুলে ধরতে হবে, এগুলো আরো ফোকাস করতে হবে।’

‘আমরা যখন বাজারে যাই তখন দেখি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, কেন উর্ধ্বগতি? আমাদের কিন্তু কোনো কিছুর অভাব নেই, আমরা প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সয়ংসম্পূর্ণ। চাল, ডাল, তরি-তরকারি, মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সবকিছুতেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। তারপরও সিন্ডিকেটের কারনে দেশের এই অবস্থা বিরাজ করছে।’

অবাক লাগে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে লক্ষ লক্ষ বেকার, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ কিন্তু মওকুফ করা হয়না। কাদের ঋণ মওকুফ করা হচ্ছে? যারা ব্যাংক থেকে লক্ষ কোটি টাকা নিয়ে খেলাপী হয়েছে তাদেরটাই বার বার মওকুফ করা হচ্ছে। তারা মওকুফ পেয়ে আবার ঋণ নিচ্ছে। বড় খেলাপীদের এই ঋণগুলো যদি এসএমই ফাউন্ডেশনসহ ক্ষদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের দেয়া হতো তবে তাদের ব্যবসা আরো সমৃদ্ধশালী হতো। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি আগেও অর্থমন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে বলেছি বড় খেলাপীদের ঋণ যাতে মওকুফ না করা হয়। কিন্তু বারবারই তাদেরকে সুবিধা দেয়া হয়। কারা ব্যাংকের মালিক হয়েছে, কিভাবে হয়েছে এগুলো আপনাদের তুলে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমার ঢাকা শহরে রাজনীতির বয়স ৫০ বছর, আমি দেখেছি অনেকে ব্রিফকেস নিয়ে ঘুরতো, অনেকের কাছে টাকা ছিলনা, অন্যের কাছে সিগারেট চেয়ে খেত। আজকে তারা ব্যাংকের মালিক। তারা সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হয়েছে। আমি মনে করি, যারা সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হয়েছেন অর্থমন্ত্রণালয়ের উচিৎ তাদের নামগুলো প্রকাশ করা। কেন ওনারা করেন না, আমি জানিনা, এটা একটা বড় প্রশ্ন।’

তিনি আরো বলেন, আজকে আমরা দেখছি যে ব্যক্তি লুটপাট করে বড় লোক হচ্ছে তাকে আরো সুযোগ দিচ্ছি। ফলে কিছু ব্যক্তির কাছে ব্যাংক থেকে শুরু করে সারা অর্থনীতি জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই সিন্ডিকেট আমাদের ভাংতে হবে। এই সিন্ডিকেট ভাংতে গেলে আপনারা যারা সাংবাদিক রয়েছেন তারা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেভাবে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে, এই সিন্ডিকেট যদি আমরা ধরতে না পারি, এই সিন্ডিকেট যদি আমরা ভাংতে না পারি, দেশের ১৭ কোটি মানুষের যে দু:খ কষ্ট… সেটা যদি লাঘব না করতে পারি তবে আমার মনে হয়, আমাদের মতো লোকের মন্ত্রী থাকা উচিৎ না।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি অনেককে দেখেছি বাজার করতে গিয়ে কাঁদছেন। কারন বাজারের যে অবস্থা তার পকেটে সে টাকা নেই। এটার এক মাত্র কারণ সিন্ডিকেট। আমাদের চিনির অভাব নাই, আমাদের চাল-ডাল তরি-তরকারি অভাব নাই।’

শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুগার মিলের যারা আখচাষী তারাই সুগার মিলের শ্রমিক, যার কারনে মিলগুলোতে লুটপাট হয়েছে, আর লুটপাটের কারণে মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের চিনির মিলগুলো যদি যথারীতি চালাতাম তবে বাজারে চিনির দাম এতো বাড়তোনা। এখন চিনির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে, চিনি খুজে পাওয়া যায়না- এগুলো হতোনা।

একইভাবে আমাদের এসএমই খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাদের যারা মুড়ি-চানাচুড় বিক্রি করে চলতো, সেখানেও দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো হাত বাড়িয়েছে। যার কারনে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সঙ্গে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে পারছেনা।

কামাল আহমেদ মজুমদার আরও বলেন, আমরা উন্নত দেশ হওয়ার ক্ষেত্রে এসএমই ফাউন্ডেশন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে। ইতিমধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত হয়েছি। আমাদের উন্নত বিশ্বের কাতারে যেতে হলে আমাদের বেকার সমস্যা সমাধান করতে হবে, আমাদের অর্থনীতিকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তা হলে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারবো। আমাদের দেশে যদি ক্ষুধা দারিদ্র ও বেকার সমস্যা থাকে তবে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ কিন্তু করতে পারবো না। আমাদের এদিকে নজর রাখতে হবে।

আমরা যাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের উত্তোরোত্তর এগিয়ে নিতে পারি আমাদেরকে সে লক্ষে কাজ করতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশনকে আগামী বাজেটে ৫ হাজার কোটি টাকা দেয়া উচিৎ। যেভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে টাকার অপচয় হচ্ছে এটি না হলে এই টাকা দেয়া কোন বিষয় না।

কয়েক দিন আগে পত্রিকায় দেখলাম বাফার এক গুদামের কাজ তিন মন্ত্রীর আমলেও শেষ করতে পারেনি, এটি মন্ত্রীদের দোষ নয়, আমলাদের দোষ। কারন লাল ফিতার দৌরাত্ব এখনও কমেনি। আমলরা যেটা বলে সেটাই আমাদের করতে হয়। মন্ত্রী যদি দুর্বল হয় আর সচিব যদি সবল হয় তবে সেখানে মন্ত্রীর কিন্তু কোন ভুমিকা থাকেনা।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...