দেশের বাইরে অর্থপাচার বা মানি লন্ডারিং অর্থনৈতিক কারণে হয় না বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ। আজ মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর পল্টনে সিএমজেএফ মিলনায়তনে টক শো অনুষ্ঠিত হয়। সিএমজেএফ সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি গোলাম সামদানী।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের বাইরে অর্থপাচার বা মানি লন্ডারিং অর্থনৈতিক কারণে হয় না। অর্থের ধর্ম হলো রিটার্ন যেখানে বেশি, সেদিকেই যাবে। দেশের বাইরে অর্থ বিনিয়োগ করলে যে রিটার্ন বেশি পাওয়া যায়, এমন নয়। বরং, দেশে বিনিয়োগ করলেই তার চেয়ে বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়। সুতরাং মানি লন্ডারিং অর্থনৈতিক কারণে হয় না।
সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটে ভালো ইস্যুয়ারগুলোকে নিয়ে আসতে হবে। আমরা এ বিষয়ে অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছি। ভালো ইস্যুয়াররা বন্ডে ও ফিক্সড ডিপোজিট দুটোতেই আসতে পারে। বন্ড মার্কেটে প্রাইমারি ট্রেড হচ্ছে কিন্তু সেকেন্ডারি হচ্ছে না। ইস্যুয়ারদের নিয়ে এসে আমাদের ইনভেস্টমেন্ট বাড়াতে হবে।
আশরাফ আহমেদ আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে যিনি দোষ করেন, এটা তার একান্ত দায়। কে হবে এটা তার নিজস্ব মত থেকে হয়। তাই কোনো একজন ব্যবসায়ী একা দোষ করলে তার দায় সব ব্যবসায়ীদের ওপর বর্তায় না।
চলতি বছরের অগ্রাধিকারমূলক কাজ অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ জানিয়ে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ হতে গেলে প্রতি বছর ইকোনমি আড়াইগুণ করতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ উৎরাতে গেলে অনেক কিছু করতে হবে। গত দেড়-দুই বছরে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেছে আমাদের ইকোনমি ও বিশ্ব ইকোনমি। প্রধানত, মুদ্রাস্ফীতির সমস্যার মধ্য দিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর কাছে যথেষ্ট পরিমাণ ডলার লিকুইডিটি নেই। এজন্য আমদানির সমস্যাটা সমাধান হচ্ছে না।
আশরাফ আহমেদ বলেন, ২০২৪ হচ্ছে আমাদের বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী এক বছর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রয়োজন পড়বে। এটা কমে গেলে খরচ কমাতে হয়। এতে করে উৎপাদন কমাতে হয়। আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করছি যেন ক্রেডিট ফ্লো-টা বাড়ানো যায়।
বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কম হওয়ায় পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করা হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি লোন নেয়া খুব ডিফিকাল্ট। এটা পুঁজিবাজারে নেই। আপনি বন্ড ইস্যু করলে ৫ বছর ১০ বছর করতে পারেন। আপনি যখন খুশি তা বিক্রি করে দিয়ে পারেন। পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করাটা একটু সময়সাপেক্ষ। এটা ইমিডিয়েট কাজ করবে না। দীর্ঘমেয়াদে এটা নিয়ে কাজ করা যাবে। অডিট রিপোর্টের একটা বাধ্যবাধকতা আছে।
এ বিষয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটে ভালো ইস্যুয়ারগুলোকে নিয়ে আসা। আমরা এ বিষয়ে অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছি। ভালো ইস্যুয়াররা বন্ডে ও ফিক্সড ডিপোজিট দুটোতেই আসতে পারে। বন্ড মার্কেটে প্রাইমারি ট্রেড হচ্ছে কিন্তু সেকেন্ডারি হচ্ছে না। ইস্যুয়ারদের নিয়ে এসে আমাদের ইনভেস্টমেন্ট বাড়াতে হবে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, আমরা বিভিন্ন পলিসি নিয়ে সরকারের সাথে কাজ করতে পারি। ১০টার মতো কোর আছে যেগুলো নিয়ে কাজ করতে পারব এ বছর।
তিনি বলেন, অনেকগুলো নতুন ধরনের ইন্ডাস্ট্রি আসছে। যেমন, স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন যে আছে, সেটার ক্যাপাসিটি বাড়াতে পারলে ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমি হতে পারবে। যদি ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টির রাইট ধরে রাখতে না পারলে নলেজ বেসড প্রপার্টি ডেভেলপ করা সম্ভব হবে না।
দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও তার দূর করার বিষয়ে তিনি বলেন, পুরনো ঢাকার যানজট খুব ক্রিটিকাল হয়ে গেছে। গতকাল ইভেন্টে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাদের যে পাইকারি ব্যবসা সেটা মার খাচ্ছে যানজটের কারণে। সেখানে যাওয়া আসাতেই পুরো সময় চলে যায়। তাই যানজট নিরসন করাটা ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক জরুরি।
তিনি যোগ করেন, ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলে ৪/৫ জনের কাছে যেতে হয়। যেগুলো ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে এক জায়গায় নিগে আসা যায়। এর জন্য লোকাল ব্যবসায়ীদের অ্যাওয়ারনেস বাড়াতে হবে। এটা কিন্তু সরকার সরাসরি এসে করে দেবে না।