মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট (৬০০ মেগাওয়াট) এবং সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আজ বুধবার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ নভেম্বর মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট (৬০০ মেগাওয়াট) উদ্বোধন করবেন।’
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) উদ্বোধন করবেন, যা থেকে বার্ষিক প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নসরুল হামিদ বলেন, দুই ইউনিটের মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি গত ২৯ জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াট। সূত্র বাসস।
প্রথম ইউনিটটি রেকর্ড ৬১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লিটি ২২ সেপ্টেম্বর স্থাপন করা হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গভীর সমুদ্রবন্দরের কাছে অবস্থিত এই মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
সূত্রটি আরো জানিয়েছে, প্ল্যান্ট থেকে পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন ১৩ হাজার ১০৪ টন কয়লার প্রয়োজন হবে।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষ প্ল্যান্টে কয়লা পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য জেটি ও সাইলোও নির্মাণ করেছে। সাইলোর ৬০ দিনের জন্য কয়লা সঞ্চয় করার ক্ষমতা রয়েছে। ৮০,০০০ টন কয়লা ধারণক্ষমতার মাদার ভেসেল সহজেই জেটিতে নোঙর করতে পারবে আর মাদার ভেসেল থেকে কয়লা আনলোড করতে মাত্র ১-২ দিন লাগবে।
পাওয়ার প্ল্যান্টের নিজস্ব জেটিতে মাদার ভেসেল প্রবেশের জন্য একটি ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩০০ মিটার প্রশস্ত চ্যানেল খনন করা হয়েছে।
ছাই ব্যবস্থাপনা ছিল এখানকার আরেকটি চ্যালেঞ্জ। যা মোকাবেলায় এখানে একটি ছাই রাখার পুকুরও খনন করা হয়েছে। যাতে ২৫ বছর ধরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই সংরক্ষণ করা যাবে। এখানে ৯০ একর ও ৬০০ একর জমি জুড়ে দুটি পৃথক ছাই পুকুর এবং কয়লা সংরক্ষণের জন্য ৮০ একর জমিতে কোল ইয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে ঘূর্ণিঝড় বা জোয়ার-ভাটায় এর কোন ক্ষতি হবে না। এজন্য সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪ মিটার উঁচুতে একটি বাঁধ ও বাঁধের ভেতরে ১০ মিটার উচ্চতার অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি উচ্চ জোয়ারের কথা মাথায় রেখেই ডিজাইন করা হয়েছে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়টি ৭ মিটার উচ্চ জোয়ার সৃষ্টি করেছিল কিন্তু এই বাঁধের উচ্চতা তার দ্বিগুণ।
৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিটটি উদ্বোধনের ছয় মাস পর দ্বিতীয় ইউনিটটি (৬০০ মেগাওয়াট) বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসবে।
২০১৪ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশ সরকার এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (জাইকা) এর মধ্যে একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটির আওতায় জাইকা ৪৩,৯২১ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে দেয় এবং বাংলাদেশ সরকার ও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)-এর নিজস্ব তহবিল থেকে অবশিষ্ট ৭,৯৩৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়।
প্রকল্পটি বহুমুখী। এই প্রকল্পে আমদানি করা কয়লা লোড-আনলোড জেটি, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, টাউনশিপ, স্থানীয় এলাকার বিদ্যুতায়ন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংযোগ সড়ক নির্মাণের মতো অত্যাধুনিক বৈশিষ্ট্য থাকবে।