সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, আলু, চিনির পর এবার বাড়তে শুরু করেছে ডালের দাম। আজ শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আমদানি করা বড় আকারের মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ঠিক দুইদিন আগেও ৯০ টাকার আশাপাশে ছিল। এছাড়া দেশি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। মুগ ডাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায়।

সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, গত এক মাসের ব্যবধানে মসুর ডালের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতি সপ্তাহে বাজারে বেড়েই চলেছে মাছের দাম। আর ওঠানামার মধ্যে থাকা সবজির বাজারও সপ্তাহ ব্যবধানে ঊর্ধ্বমুখী। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা, ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, ৮শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা ও ৫শ’ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে প্রতিকেজি দেশি মাগুর ১ হাজার ৫০০ টাকা, দেশি শিং ১ হাজার ৬০০ টাকা ও শোল ১ হাজার টাকা ও নদীর পাঙাশ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিকেজি টেংরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, রুই ৩৯০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৭০০ থেকে ৮৫০, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, কোরাল ৮০০ টাকা ও তেলাপিয়া ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতারা জানান, বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি। যা দিন দিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফারুক হাসান নামে এক ক্রেতা বলেন,
বাজারে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে মাছের দাম একটু বেশিই চড়া। গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে মাছ কিনতে হচ্ছে।

আরেক ক্রেতা আকিব বলেন, বাজারে দেশি মাছের দাম আকাশছোঁয়া। প্রতিকেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এখনই বাজারের লাগাম টেনে ধরা দরকার।

সপ্তাহ ব্যবধানে প্রতিকেজিতে সবজির দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ২০০ টাকা, শষা ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা কহি ৬০ টাকা ও বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি মুলা ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ঢেড়স ৬০ টাকা, কচুর মুখী ৮০ টাকা, ও টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর প্রতিপিস লাউ ৬০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।

বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের দাম। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। এ ছাড়া লাল লেয়ার ৩২০ থেকে ৩৫০ ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায়।

স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দামও। বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। আর প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়।

কয়েক সপ্তাহ ধরে অস্থির ডিমের বাজারও রয়েছে স্থিতিশীল। নতুন করে বাড়েনি দাম। বাজারভেদে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪৪ থেকে ১৫০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৪ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি ডজন হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়।

এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে নিম্নমুখী দেশি পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। তবে বেড়েছে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা, আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতিকেজি দেশি রসুন ২৪০ টাকা ও আমদানিকৃত রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৮০ টাকায়।

বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে চালের দাম। বাজারে প্রতিকেজি আটাশ ৪৭ থেকে ৫০ টাকা, মিনিকেট ৬০ থেকে ৬২ টাকা, জিরাশাইল ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৬৫ টাকা ও পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়।

বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে চালের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা কম। কারওয়ান বাজারের হাজী ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. মহিউদ্দিন জানান, দেশে চালের যথেষ্ট মজুত রয়েছে। সিন্ডিকেট না হলে চালের দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

বাজারে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে মসলার দাম। প্রতিকেজি জিরা ১ হাজার ১০০ টাকা, গোল মরিচ ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, শুকনা মরিচ ৪০০ টাকা, এলাচ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, দারুচিনি ৪০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৫০০, কাঠবাদাম ৭৯০ টাকা, কাজুবাদাম ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে আটা ও ময়দার দামও। প্রতিকেজি খোলা আটা ৪৫ টাকা ও প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। প্রতিকেজি ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। আর নতুন দাম নির্ধারণের পর চিনি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।

তবে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৪ টাকায় বিক্রি হলেও খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।

বিক্রেতারা জানান, এরই মধ্যে নতুন দামের প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল বাজারে এসেছে। বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দামেই। তবে খোলা সয়াবিন তেল মিল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ না হওয়ায় দাম বাড়তি।

আর গত মাসের ১৩ আগস্ট প্রতিকেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ১৩৫ টাকা থেকে ৫ টাকা কমিয়ে ১৩০ টাকা এবং প্রতিকেজি পরিশোধিত প্যাকেট চিনি ১৪০ টাকা থেকে ৫ টাকা কমিয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

নিত্যপণ্যের এ অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।

আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *