বাংলাদেশে হাজার হাজার বিরোধী নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার এবং কারাগারে নির্যাতনের খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া দেশটি সকল পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে বলেছে।
একইসঙ্গে সকল পক্ষ যেন স্বাধীনভাবে, হয়রানি এবং সহিংসতামুক্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে, নির্বাচনের আগে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারে প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এদিনের ব্রিফিংয়ে আসন্ন নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে প্রশ্নও উঠে এসেছে।
এদিনের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশে ভুয়া সংবাদ এবং ভিডিও প্রচারের বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভুয়া সংবাদ এবং ভুয়া ভিডিও বানিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের বিরোধীদলগুলোর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত প্রচারণা চালাচ্ছে। এই রিপোর্টে সামনে আসা অভিযোগের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অবস্থান কী?
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমরা বাংলাদেশে নির্বাচন-সংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো সম্পর্কিত ওই সংবাদটি দেখেছি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) এই ধরনের ব্যবহার বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যহত এবং ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্বেগজনক প্রবণতার অংশ।
পরে ওই সাংবাদিক বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক ৬ সংগঠনের উদ্বেগ প্রকাশ সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে পুরো বাংলাদেশকে কারাগারে রূপান্তরিত করেছে ক্ষমতাসীন সরকার। ডিসেম্বরের ১৮ তারিখ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা ছাড়া সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এবং তার সহকারী দাবি করেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ম্যানেজ করে ফেলবেন। নতুন সরকার গঠন করার পর সেই সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন জানাবে বলেও তারা দাবি করেছেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরে মিলার বলেন, বাংলাদেশে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গণগ্রেপ্তার এবং কারাগারে নির্যাতনের খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা সকল পক্ষকে সংযম প্রদর্শন এবং সহিংসতা এড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারকে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে সকল অংশীদারদের (স্টেকহোল্ডার) সাথে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি যেখানে সবাই সহিংসতা বা প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই প্রাক-নির্বাচন এবং নির্বাচনী পরিবেশে অবাধে অংশগ্রহণ করতে পারে।
ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারায় ভিন্নমতের কথা বলার স্বাধীনতা, সংলাপ এবং আলোচনার মাধ্যমে উপকৃত হওয়া যায়।
পরে এক প্রশ্নকারী নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করছেন। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনও নতুন খবর আছে কি?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, আমার কাছে আজ ঘোষণা করার মতো নতুন কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নেওয়া বা ঘোষণা করার আগে আমরা সেগুলো নিয়ে (প্রকাশ্যে) আলোচনা করি না।