সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

বহুল আলোচিত-সমালোচিত শিল্প গ্রুপ এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা সাতটি ব্যাংকসহ মোট ১২টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ১০টি ব্যাংকই দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভাঙ্গা এবং নতুন পর্ষদ গঠন নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং নীতি ও প্রবিধি বিভাগ। খুব শিগগির এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এরই মধ্যে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে একজন প্রশাসক বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে। আর দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে পুরো পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হতে পারে। সেখানে ২০১৭ সালের আগে যাঁরা পর্ষদে ছিলেন, তাঁদের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে আনা হবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

এদিকে, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে ব্যাংকটির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গভর্নর বরাবর পাঠানো চিঠিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে সই করেছেন ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এ এস এম রেজাউল করিম।

চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেশের সর্ববৃহৎ ব‍্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের বোর্ড অব ডাইরেক্টরস ও কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যাংকের তহবিল লুটপাটের কিছু চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। দীর্ঘদিন এই লুটপাটের ধারা অব্যাহত থাকার কারণে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং ব্যাংকটির প্রতি গণমানুষের আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা, গ্রাহকের আস্থা ফেরানো এবং ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত, ইসলামী ব্যাংকের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তি অথবা সাবেক পরিচালকদের মধ্য থেকে কিছুসংখ্যক ব্যক্তির সমন্বয়ে বোর্ড পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও যেসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলো হলো ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।

এস আলম গ্রুপের বাইরে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হতে পারে- এমন তালিকায় রয়েছে এবি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল (ইউসিবি) ব্যাংক।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলমের সাত ব্যাংকের নতুন ঋণ বন্ধ করার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে গত মঙ্গলবার এস আলমের সাতটিসহ মোট নয়টি ব্যাংকের লেনদেনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ সুবিধা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া এস আলমের সাত ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাচার ঠেকাতে ১ কোটি টাকার বেশি লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পরেই বলেছেন, ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। প্রয়োজনে এস আলমের মালিকানাধীনসহ দুর্বল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে হবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *