ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক সংযোগ গড়ে তোলা এবং অর্থনীতির চাহিদার উপর ফোকাস করার পাশাপাশি সমগ্র অঞ্চল এবং সামগ্রিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করতে আগ্রহী প্রকাশ করেছে ভারত ও বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে দেশ দুইটি ক্যাপিটাল মার্কেট সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদির আদান প্রদানসহ একসঙ্গে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধেও কাজ করবে। আইন লঙ্ঘনকারীকে খুঁজে বের করা ছাড়াও একসঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। ভারতের আহ্বানের সাড়া দিয়েই বাংলাদেশ আগ্রহ দেখিয়েছে।  

সম্প্রতি গত ২৬ মে গ্রীসের রাজধানী এথেন্সে আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ (আইএফএসসিএ) এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অব বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা  স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে করে। বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রূবাইয়াত উল ইসলাম এবং আইএফএসসিএ’র চেয়ারম্যান শ্রী কে রাজানমন এমওইউ সাক্ষর করেন। গত ২৬ মে গ্রীসের রাজধানী এথেন্সে আইএসওকো’র বার্ষিক সম্মেলনের সাইডলাইনে বিএসইসি ও আইএফএসসিএ’র মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়।

আইএফএসসিএ হলো ভারতের ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস সেন্টারে আর্থিক পণ্য, আর্থিক পরিষেবা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির উন্নয়ন এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ কর্তৃপক্ষ। আইএফএসসিএ হলো ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা কেন্দ্র। এটি গুজরাটে অবস্থিত। ২০২০ সালের ২৭ এপ্রিল এটি গঠিত হয়। এটি প্রতিষ্ঠার আগে দেশীয় আর্থিক নিয়ন্ত্রক আরবিআই, সেবি, পিএফআরডিএ এবং আইআরডিএআই আইএফএসসিতে ব্যবসা নিয়ন্ত্রিত করেছিল। নিয়ন্ত্রক পরিসেবা কেন্দ্র আইএফএসসিএ মূল উদ্দেশ্য হল একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক সংযোগ গড়ে তোলা এবং ভারতীয় অর্থনীতির চাহিদার উপর ফোকাস করার পাশাপাশি সমগ্র অঞ্চল এবং সামগ্রিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করা।

জানা গেছে, কোন দেশের সাথে ক্যাপিটাল মার্কেট বা অন্য যেকোন বিষয়ে যখন কোন সমঝোতা স্মারক সই হয়, তখন দুই দেশের সরকারের অনুমোদন নিয়েই তা করা হয়ে থাকে। সবকটি সমঝোতার ক্ষেত্রেই এমনটি ঘটে থাকে। আর এই ক্ষেত্রে প্রস্তাব এসেছে ভারতের আইএফএসসিএ’র কাছ থেকেই। আইএফএসসিএ’ হচ্ছে ভারতের গুজরাটে অবস্থিত বিশেষায়িত একটি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। যা মানি মার্কেট, ক্যাপিটাল মার্কেট, বিমা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে সবকিছুই দেখভাল করে থাকে। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া রয়েছে যারা মুদ্রাবাজার দেখে, বাংলাদেশে যেমন ইআরডিএ রয়েছে ও ভারতে ঠিক তেমনি বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে। 

সেখানে বাংলাদেশের বিএসইসির মতো সংস্থা সেবিও ক্যাপিটাল মার্কেট দেখভাল করে। কিন্ত আইএফএসসিএ একসঙ্গে সবকিছুই নিজেই দেখভালের দায়িত্ব পালন করে থাকে।  প্রথমে সংস্থাটি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আবেদন করে ভারত এমওইউ করতে চায়। পরে দুইপক্ষের মধ্যে নানা পর্যায়ে কথাবার্তা হওয়ার পর নিজেদের সরকারের অনুমোদন নেয়।

এমওইউয়ের মূল লক্ষ্য থাকে দুইটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা। আইএসওকোর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের অনেক দেশের সঙ্গেই এমওইউ করা হয়েছে। আইএফএসসিএ’ও আইএসওকোর সদস্য। আইএসওকোর সঙ্গে মাল্টিলেটারেল এমওইউতে সংস্থাটিও আছে। এর পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তানের সঙ্গে অন্যান্য দেশও রয়েছে। এথেন্সে বেশ কয়েকটি দেশের চুক্তি হয়েছে। সেবির পাশাপাশি গ্রীসের সঙ্গেও চুক্তি রয়েছে।

এমওইউয়ের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশ কোন ইস্যুতে সরাসরি কো-ওপারেশন করতে পারে। আইএসওকোর এমওইউকে একটু কঠিন থাকে। বিভিন্ন নিয়মকানুন ফরম সি’র মাধ্যমে পূরণ করলে নানা নিয়মকানুন চলে আসে। এনফোর্সমেন্ট ইস্যুস হলে দুই দেশের কমিউনিউকেশন করতে গেল কিছুটা সমস্যা হয়। দুটো দেশ দ্বিপাক্ষিক এমওইউ হয়ে গেলে কোন সমস্যা থাকে না। বিশেষ করে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে দুই দেশের এখানে আসা ওখানে যাওয়া সহজ হয়। তথ্য সংগ্রহ আদান প্রদানের সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হয়। তবে সবই হতে হয় সিকিউরিটিজ মার্কেট সম্পর্কিত। অন্য কোন মার্কেটের বিষয় এমওইউতে নেই। ক্যাপিটাল মার্কেটের মার্কেটের ইনফরমেশন এখানে দেওয়া যাবে না। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে যদি বাংলাদেশ মনে করে কোন ইস্যু দেশের বিরুদ্ধে চলমান আইনের বিরুদ্ধে। তবে সেক্ষেত্রে তা দিতে অস্বীকার করতে পারে বাংলাদেশ।  আবার ভারতও এই ক্ষেত্রে সেটি করতে পারে। এমওইউতে একটা অনুচ্ছেদ এসব রাখা হয়েছে। এটা সব এমওইউতেই থাকে। এমওইউ কোন লিগ্যাল ডকুমেন্টস না। এটি একটি সিস্টেম যা দুই দেশের মধ্যে চলমান কূটনীতি পরিপূরণের মাধ্যম বলে সম্পন্ন হয়।

এমওইউ’র প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে নানা করম ইমফোর্সমেন্ট বাস্তবায়ন। যেমন ভারতের কোন নাগরিক বাংলাদেশে এসে চাকরি বা অন্য কোন ইস্যুতে এসে কোন মার্কেটের কেলেঙ্কারি বা ম্যানিউপুলেশনে জড়িত হলো। টাকা নিয়ে চলেও গেল কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তাকে ধরতে পারেনি। তখন বাংলাদেশ আইএফএসসি’তে বলতে পারে তাঁকে খুঁজে এনে দাও। দুই দেশের মধ্যে এমওইউ না থাকলে তাদের এটি বলা কঠিন। আর বললেও সেই বাধ্য নয় সেটা শুনতে। আইএসওকোর এমওইউয়ের মতো দ্বি-পাক্ষিক এমওইউতেও বলা হয়ে থাকে যে, অপরাধীর কোন গন্ডি নেই। অপরাধীদের সম্পর্কে বা বিনিয়োগকারীদের তথ্য সবার সামনে উন্মুক্ত করে দেওয়াই এসবের লক্ষ্য থাকে। উদ্দেশে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গকারীদের কোন নিরাপদ আবাসস্থল নেই। বাংলাদেশ বোঝাতে চাচ্ছে অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে ইন্টারপোলের মতো অপরাধীদের যেভাবে ধরা সম্ভব হতো ঠিক তেমনই সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যেই এমওইউ। ঠিক তেমনি বাংলাদেশের কোন নাগরিক যদি সেখানে আইন ভঙ্গ করে তাদের বিরুদ্ধেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। প্রত্যেক এমওইউয়ের মধ্যে কনফিডেন্সয়িাল ক্লজ থাকে। ক্লজে বলা হয়ে থাকে আইএফএসসিএ’র কোন পর্যায়ে বাংলাদেশ যোগাযোগ করতে পারবে। কারণ সংস্থাটির সব মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারা যাবে না। যার কাছে তথ্যাদি জানানো হবে, সেটি নিজের কাছে গোপন রাখবে এটিই এমওইউতে উল্লেখ রয়েছে। যেমন যেসব বাংলাদেশের কোন ব্যক্তি যদি কোন ব্রোকারেজ হাউসে একাউন্ট খোলে তবে সেই

একাউন্টের সূত্র ধরে সবকিছু বের করে ফেলতে পারা সম্ভব হবে। ঠিক তেমনি ভারতের ওখানকার কারও তথ্য বাংলাদেশকে দিতে পারা সম্ভব হবে। যখন ভারতের রেগুলেটরারা একসঙ্গে কাজ করবে তখনই এটি সহজ হবে। এনফোর্সমেন্ট বা সুপারভিশনের ক্ষেত্রে এটি হয়ে থাকে। এমনি চুক্তিবন্ধ দেশগুলো অনেক তথ্যই জানতে চায়। যেমন ভারত জানতে চায় বিএসইসির অফিসাররা শেয়ারমার্কেটে বিনিয়োগ করতে পারবে কিনা। তখন তাদের জানিয়ে দেওয়া হয় যে বাংলাদেশে শেয়ারবাজারে ব্যবসা করতে পারি না। বিও হিসাব খুলতে পারা যায় না। এইসব জিনিস বা বিষয় হয়তো তারা অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে। এছাড়া ভারতের সংস্থাটি জানতে চায় মূলত বাংলাদেশের বিএসইসিতে ঠিক কতোজন কর্মরত আছে, বাংলাদেশের অর্গানোগাম কি?।

মূলত ক্যাপাসিটি বিল্ডিং নিয়ে বেশি তথ্য আদান প্রদান হচ্ছে বর্তমানে। আগামীতে সাক্ষরিত এমওইউয়ের মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসায়িক পরিমন্ডল বৃদ্ধি পাবে। আর একে অপরের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পালে হাওয়া লাগাবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...