ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন জোট আবারও বড় জয় পেতে যাচ্ছে বলে বুথফেরত জরিপে আভাস পাওয়া গেছে। নির্বাচন ৫৪৩ আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৫০টিরও বেশি আসন পাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে আগে থেকেই এসব জরিপ প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেস। বিশ্লেষকরাও বলছেন, ভারতের বুথফেরত জরিপের ফল শেষ পর্যন্ত নির্ভুল নাও হতে পারে। আগামী মঙ্গলবার ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
ভারতে দেড় মাস ধরে চলা বিশ্বের দীর্ঘতম নির্বাচনের সপ্তম ও শেষ দফার ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে শনিবার। এদিন আট রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৫৭টি লোকসভা আসনে ভোট গ্রহণ হয়। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ৫৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ভোট গ্রহণের পরপরই সন্ধ্যায় বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সংস্থার বুথফেরত জরিপ প্রকাশ পায়।
ভারতে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন হয় ২৭২টি আসন। রিপাবলিক টিভি-ম্যাট্রিজের বুথফেরত জরিপে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৫৩ থেকে ৩৬৮টি আসন পাবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট পাবে ১১৮ থেকে ১৩৩টি আসন। অন্যরা পাবে ৪৩ থেকে ৪৮ আসন।
এনডিটিভির জরিপে বলা হয়, ক্ষমতাসীন এনডিএ জোট পাবে ৩৬৫ আসন; ইন্ডিয়া জোট পাবে ১৪২টি। অন্যরা পাবে ৩৬টি আসন। জন কি বাত-এর জরিপে এনডিএ জোটের আসন দেখানো হয়েছে ৩৬২ থেকে ৩৯২; ইন্ডিয়া জোটের ১৪১ থেকে ১৬১টি। অন্যরা পাবে ১০ থেকে ২০টি আসন। ইন্ডিয়া নিউজের জরিপে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৭১ আসন পাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট পাবে ১২৫ আসন; অন্যরা ৪৭ আসন। জরিপের ফলাফল সত্য হলে বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।
তবে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষ থেকে শনিবার গণমাধ্যম ও জরিপ সংস্থার বুথফেরত জরিপ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ নিয়ে কোনো টেলিভিশন চ্যানেলে তারা বিতর্কে অংশ নেবেন না। এটিকে ‘পূর্বনির্ধারিত’ বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। জোটের শরিক দল আম আদমি পার্টির নেতা সঞ্জয় সিং বলেন, বুথফেরত জরিপ বিজেপির সাজানো; এতে ইন্ডিয়া জোট যে ২৯৫ আসনে জিতবে, সে বিষয় অন্তর্ভুক্ত নেই।
শেষ দফায় পশ্চিমবঙ্গের ৯টি আসনে ভোট হয়েছে। ভারতজুড়ে শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও পশ্চিমবঙ্গে বিচ্ছিন্ন সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। রাজ্যটিতে বিভিন্ন দলের তরফ থেকে নির্বাচন চলাকালে প্রায় তিন হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে; বেশির ভাগ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলটিতে ইভিএম পুকুরে ছুড়ে ফেলা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বসিরহাট লোকসভা আসনের হাসনাবাদের পাটলি খানপুর পঞ্চায়েতের ৬১ নম্বার বুথে সিপিআইএম প্রার্থী নিরাপদ সরদারের বুথ এজেন্টকে বসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বারাসাত লোকসভা আসনের দিগবেরিয়া নদীভাগ স্পোর্টিং ক্লাবে ২৩৩ নম্বর বুথে তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদারের পোলিং এজেন্ট মোহাম্মদ শহীফ উদ্দিন ওরফে বাপিকে বুথের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায়।
যাদবপুর লোকসভা আসনের ভাঙড়ের নলমুড়িতে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কয়েকজন আহত হন। ওই আসনের সাতুলিয়া এলাকায় আইএসএফ ও সিপিআইএম দলীয় কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে আরও বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
গতকাল ৯০৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের বারানসী কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিজেপির শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ কেন্দ্রে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন কংগ্রেসের অজয় রায়।
শেষ দফায় ভারতজুড়ে সমাজের বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ভোট দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত, বিজেপি নেতা জেপি নাড্ডা, বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদব ও রাবড়ি দেবী, আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সংসদ সদস্য রাঘব চাড্ডা, সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার হরভজন সিং প্রমুখ।
এদিন দক্ষিণ কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসপ্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মমতার ভাতিজা তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দক্ষিণ কলকাতার সাউথ সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভোট দেন অভিনেতা দীপক অধিকারী (দেব)। চেতলার একটি স্কুলে ভোট দেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, ঠাকুরপুকুর জনকল্যাণে ভোট দেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন বিজেপি নেতা ও খ্যাতিমান অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী।