কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্রাজিলকে গরু পাঠানোর অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। দূরত্ব বিবেচনায় বিষয়টি জটিল। তবে চাইলে এটি সম্ভব বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস।
বুধবার (৬ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত।
ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে মাংস খাতের বিশাল সম্ভাবনা আছে ব্রাজিলের। ব্রাজিল গরুর মাংস রপ্তানি করে থাকে। এটা বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ভালো বাণিজ্য হতে পারে। এর মধ্যে দিয়ে উভয় পক্ষই লাভবান হবে। ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশের ভৌগলিক দূরত্ব অনেক বেশি। সেখান থেকে জীবন্ত গরু আনা কঠিন ও জটিল হলেও অসম্ভব নয়।
গত ৭-৮ এপ্রিল ঢাকা সফর করেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা। সে সময় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে আগামী কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে গরু পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায় কি না সে বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন।
চলতি বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট লুলা।
প্রধানমন্ত্রীর ব্রাজিল সফর প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো বলেন, জুলাইয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ব্রাজিল যাবেন। তিনি জি-২০ সম্মেলনের আগে ব্রাজিল সফর করবেন। যদি তিনি ব্রাজিল যান তাহলে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে যে চুক্তিগুলো সম্ভব হয়নি তা হয়ত স্বাক্ষর হতে পারে।
বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে বাণিজ্যের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে পাওলো ফার্নান্দো বলেন, দুই দেশের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য বিদ্যমান। আমরা বাণিজ্য ভারসাম্য ও বৈচিত্র্য আনতে চাই।
ব্রাজিলের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ব্রাজিল বাংলাদেশি আরএমজি পণ্যের একটি বড় বাজার হতে পারে। ব্রাজিলের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক পণ্য শুল্ক বেশি দিতে হয়। এই শুল্ক কীভাবে কমানো যায়, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে এই কাজটি খুব সহজ নয়। এটা ধাপে ধাপে হবে বলে আশা করি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ব্রাজিল বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী। তবে এটা শুধু বাণিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এতে কারিগরি সহযোগিতা থাকবে। এটা হলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও বাড়বে। দুই দেশের মধ্যে বিশেষ করে, বাণিজ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করার বিশাল সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে বাণিজ্যের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান পাওলো ফার্নান্দো।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বিশ্বে বিভিন্ন সংকটের মাঝে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রাজিলের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হচ্ছে। ভারত ব্রাজিল থেকে প্রচুর ইথানল কেনে। কোভিডের পর ইউক্রেন যুদ্ধ, ইজরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্ব পরিস্থিতি অস্থির হয়ে পড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই তেলের বিকল্প হিসেবে ইথানল ব্যবহার সস্তা হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাসন। এটাই সবচেয়ে উত্তম সমাধান।
ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত জানান, ব্রাজিল ভ্রমণে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে ২৫০-৩০০ ভিসার আবেদন হয়। তবে আমরা প্রতি মাসে ১০০টি ভিসা ইস্যু করতে পারি। সেজন্য ঢাকায় একটি ভিসা সেন্টার খোলার উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা একটি ভিসা সেন্টার খুলতে পারব।
অনুষ্ঠানে ডিক্যাব সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু বক্তব্য রাখেন।