বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রেখে যাওয়া অর্থনৈতিক উত্তরাধিকার ছিল ব্যাপক ও বিস্তৃত দুর্নীতির চিত্র, বিশেষত সরকারি সম্পদের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে। এমন চিত্রই উঠে এসেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির শ্বেতপত্রের খসড়ায়।
এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকখাত ছিল সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত খাত, এরপর রয়েছে ভৌত অবকাঠামো এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতটিও সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে একটি।
রোববার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কার্যালয়ে খসড়াটি জমা দিয়েছে জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।
শ্বেতপত্রের খসড়ায় বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত ব্যাংকখাতে ঋণ জালিয়াতি; ব্যাংক ঋণ জারির ক্ষেত্রে জালিয়াতি, অনিয়ম ও ঋণের অপব্যবহার ইত্যাদি চিত্র উঠে এসেছে। রাষ্ট্রীয় শক্তির অন্যায্য ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকানা দখল নেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া, অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া অবাস্তব প্রকল্প; অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয় এমন সব প্রকল্প গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় করা হয়েছে, এসব প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়ও বারবার বাড়ানো হয়েছে।
ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো; প্রকল্পের বরাদ্দ আত্মসাৎ করে তা পাচারের জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের পর কৃত্রিমভাবে ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো হয়, যাতে নতুন বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করা যায়।
একচেটিয়া দরপত্র প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক সমর্থক, অনুগত ও তোষণকারীরা যেন দরপত্র পায় তা নিশ্চিত করা হয়, এতে বাদ পড়ে যান যোগ্য ঠিকাদাররা।
অদরকারি ও দুর্বল প্রকল্প প্রণয়ন; প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সঠিকভাবে না করার ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের অপচয় হয়েছে, বেড়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ও ব্যয়।
নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণ; প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, বিশেষত প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়েই তাদের মেধা বা যোগ্যতার পরিবর্তে রাজনৈতিক পরিচয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
অবৈধভাবে জমি ও সম্পত্তি দখল; অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ জমি ও অন্যান্য সম্পদ দখল বা কিনেছে বিগত সরকারের লোকজন।
ভূমি অধিগ্রহণের তহবিলের নয়-ছয়; রাজনৈতিকভাবে দুর্বল বা যাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্রব নেই– এমন জমির মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কম দামে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছে, অন্যদিকে সরকারি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের টাকা নিয়ে দুর্নীতি করা হয়েছে।
অতি-মুল্যায়িত ঠিকাদারি চুক্তি; প্রতিযোগিতামূলক দর আহ্বান না করে, অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব থাকা ঠিকাদারদের বেশি দরে সরকারি কাজের ঠিকাদারি দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের সম্পদের অপব্যবহার; প্রকল্পের জন্য কেনা গাড়ি, ভ্রমণের বাজেট ও অন্যান্য সম্পদ সংশ্লিষ্টরা নিজেদের ব্যক্তিগত কাজে এবং রাজনৈতিক ফায়দা নিতে ব্যবহার করেছে।
ঘুষ হয়ে পড়েছিল স্বাভাবিক; সরকারি কাজ পাইয়ে দেওয়া বা দ্রুত কোনো কাজ করাতে হলে – সেবাপ্রার্থীদের ঘুষ প্রদান করতে হয়েছে।
সরকারি তহবিলের অপব্যবহার; উন্নয়নের জন্য অভিষ্ট তহবিল নিজেদের রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন রাজনৈতিক নেতারা।
অভিজাতদের কর অব্যাহতি প্রদান; প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোকে সুবিধা দিতেই প্রণীত হয় বিভিন্ন রকম অব্যাহতিমূলক কর নীতি।