নভেম্বর ২৮, ২০২৪

ব্যাংকগুলোতে তারল্যের বা নগদ টাকার চাপ আবার বেড়েছে। এই চাপ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধারের প্রবণতাও বেড়েছে। পাশাপাশি কলমানি মার্কেট থেকেও ধার করছে ব্যাংকগুলো। এছাড়াও এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে মেয়াদি আমানতও নিচ্ছে। তারল্য সংকট মোকাবিলায় বাড়তি আমানত সংগ্রহের জন্য ইতোমধ্যে অনেক ব্যাংক আমানতের সুদ হার বাড়িয়েছে। কিছু ব্যাংকে এ হার ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

তারল্য সংকট মোকাবিলায় চলতি মাসের মঙ্গলবার পর্যন্ত চার কার্যদিবসে ব্যাংকগুলো বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ৫৭ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে কলমানি মার্কেট ও স্বল্প ও মেয়াদি ধার হিসাবে প্রতিদিনই আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা ধার করছে। কলমানিতে ধার করা ব্যাংকগুলোর নিত্যনৈমিত্তিক কাজ হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করছে বিশেষ প্রয়োজনে।

সরকারকে ঋণের জোগান দিতে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যেসব ট্রেজারি বিল ও বন্ড কেনে তা জরুরি প্রয়োজনে ফের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে নগদ টাকা ধার নিতে পারে। এ উপকরণ ব্যবহার করেই এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ধার করছে।

গত বৃহস্পতিবার ১ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একদিন মেয়াদি রেপোর (ট্রেজারি বিল পুনরায় কিনে নেওয়ার চুক্তি) আওতায় ধার করেছিল ১২ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। রোববার ৪ ফেব্রুয়ারি ধার করেছে ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা, গত সোমবার ধার করেছে ২১ হাজার ১০১ কোটি টাকা। যা গত দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিন কলমানি মার্কেট থেকে নিয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। দুটো মিলে ওইদিন ধারের পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা। এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। মঙ্গলবার রেপোর মাধ্যমে নিয়েছে ১৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কলমানি মার্কেটসহ এদিন মোট ধার করেছে ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি। ফলে গত সোমবার ও মঙ্গলবার এ দুই দিনে ধার করেছে প্রায় সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।

মঙ্গলবার ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেট, স্বল্প ও মেয়াদি ধার করেছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। সুদের হার সাড়ে ৯ শতাংশেই রয়েছে। এ হার এর মধ্যে কয়েকদিন ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। মেয়াদি ধারের সুদ হার পৌনে ১২ শতাংশে উঠেছে। আগে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

এ সরকার নতুন করে দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ বিতরণের চাহিদা বেড়েছে। একই সঙ্গে আমদানির চাপও বেশি। আসন্ন রোজা উপলক্ষ্যে উদ্যোক্তারা ডলার কিনে এলসি খুলছেন। এতে করে টাকার চাহিদা বেড়েছে। এদিকে সরকারের ব্যাংক ঋণ কমেছে রেকর্ড পরিমাণে। তারপরও ব্যাংকে তারল্য সংকট কাটছে না। এটিকে অনেক ব্যাংকার অস্বাভাবিক মনে করেন। কারণ সরকারই সবচেয়ে বেশি ঋণ গ্রহণ করে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের ঋণ ৩০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। যা আগে ছিল হাজার কোটি টাকার ওপরে। এ হিসাবে ব্যাংকে তারল্য সংকট হওয়ার কথা নয়। তবে অনেকে বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং আগের ঋণ পরিশোধ করায় বাজারে তারল্যের প্রবাহ কমেছে। এ কারণে সংকট দেখা দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্যের চাপ আরও বাড়বে। সে বিষয়ে ইতোমধ্যেই ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

এদিকে ব্যাংকগুলোতে যে হারে ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, ওই হারে আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্যের কিছুটা টানাটানি রয়েছে। এছাড়া আমদানি দায় মেটানো, বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ ও রোজা উপলক্ষ্যে ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য নতুন এলসি খুলতে ডলার কেনার ক্ষেত্রে টাকার চাহিদা আগের চেয়ে বেড়েছে। এ কারণে অনেক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবদ্ধ আমানত রাখতে পারছে না। কয়েকটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাব নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। ওইসব ঘাটতিও মেটাতে হচ্ছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...