নভেম্বর ২৬, ২০২৪

উন্নয়নের সঙ্গে বোঝা বাড়ছে বৈদেশিক ঋণেরও। গত সাত অর্থবছরে দ্বিগুণ বেড়ে বিলিয়ন ডলার হিসাবে সরকারি ও বেসরকারি ঋণ এখন সেঞ্চুরির ঘরে। চলমান সংকটে বিষয়টিকে আশঙ্কাজনক মনে করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আরও ঋণ প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তাই সক্ষমতা অর্জনে রফতানি আয়ে বহুমুখীকরণ ও রেমিট্যান্সে জোর দিয়ে রিজার্ভ বাড়ানোর পরামর্শ তাদের।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সবশেষ দেড় দশকে অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে দেশের সার্বিক যে পরিবর্তন এসেছে, তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে যুগান্তকরী। এতসব উন্নয়ন আর অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সরকারের সদিচ্ছার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে উন্নয়ন সহযোগী ঋণ প্রদানকারী দেশ ও সংস্থা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি নানামুখী কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে এরই মধ্যে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ একশ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। এর মধ্যে সরকার এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নেয়া ৭৯ বিলিয়ন ডলার; বাকি ২১ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাতে নেয়া। এসব ঋণের প্রায় ৮৪ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি, আর বাকি ১৬ শতাংশ ঋণ স্বল্পমেয়াদি। প্রয়োজনেই বিগত সাত অর্থবছরে এসব ঋণ দ্বিগুণ হয়েছে।

তবে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, রিজার্ভের পাশাপাশি চলমান বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের মধ্যে কীভাবে সরকার ধাপে ধাপে এত ঋণ পরিশোধ করবে? এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা দিচ্ছেন ভয়ংকর পরামর্শ। ঋণ পরিশোধে আরও ঋণ নেয়ার পরামর্শ।

বৈদেশিক ঋণের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, আমাদের যদি ২০২৪ সাল থেকে ঋণ পরিশোধ করতে নাও হতো, তারপরও কিন্তু আমরা বড় ধরনের চাপের মুখে থাকতাম। আমাদের আগামী বছর থেকে যে মোটা অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করতে হবে, সেটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য যথেষ্ট পরিমাণ চাপ তৈরি করবে। সুতরাং, এখন যেহেতু পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়, এ অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ পরিস্থিতি, সেটির উন্নতি ঘটাতে হলে আমাদের আরও কিছু ঋণ দরকার। ‍সুতরাং, এখন দ্বিপাক্ষিক যেসব ঋণ রয়েছে, যেগুলোর শর্ত কঠোর, সেগুলো পরিহার করে আমাদের ভালো উৎস থেকে ঋণ নিতে হবে।

আগামী বছর থেকে মেগা প্রকল্পসহ বিভিন্ন ঋণ পূরণে প্রতিবছর ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

তবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এ পরিমাণ ঋণকে আশঙ্কাজনক মনে করছেন না অর্থনীতিবিদ ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের আয় করে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আমাদের রফতানি ও রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে আমাদের পণ্য রফতানির গন্তব্য বাড়াতে হবে। আমরা একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে গার্মেন্টস খাত নিয়ে বসে আছি। আমাদের চামড়া শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের পণ্য রফতানি করার মাধ্যমে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাণিজ্যিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত দাতা দেশ বা সংস্থার দেয়া ঋণের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ ঋণ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। এরপর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) রয়েছে ২৪ শতাংশ, আর ১৭ শতাংশ দিয়েছে জাপান। খবর সময় টিভি

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...