করোনা মহামারি ওরাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পূর্বে বাংলাদেশ গড়ে ৬% এর বেশি প্রবৃদ্ধি নিয়ে উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। যেখানে বেসরকারি খাত দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ আকর্ষণ, উৎপাদনশীলতা ও বাণিজ্য প্রসারের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি অর্জনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। বর্তমানে, জিডিপিতে বেসরকারি খাতের অবদান ৮০% এর বেশি, যার মধ্যে শিল্পের অবদান প্রায় ৩৭%।
বেসরকারি খাত বাংলাদেশের স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালীকরনের পাশাপাশি বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনেও অবদান রেখে চলেছে। এই ধারাবাহিক অগ্রগতি অব্যাহত রেখে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট এবং উন্নত অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ভূমিকা অপরিসীম থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ নিম্নমুখী হওয়া প্রবনতা পরিলক্ষিত হচেছ।
করোনা মহামারির কারণে বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগের হার কমে ২১.২৫% নেমে আসে, যা বিগত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। মহামারির ধাক্কা সামলে যখনই বাংলাদেশের অর্থনীতি পূর্বের ন্যায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সরবরাহ ব্যবস্থার জটিলতা দেশের অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্থ করে। ফলস্বরূপ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির ২৪.৮% বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২১.৮% অর্জিত হয়েছে। এবিষয়ে সরকার ওঅন্যান্য অংশীজনদের বিভিন্ন প্রচেষ্টা স্বত্বেও বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত পর্যায়ে অর্জিত হয়নি।
২০২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে, সরকারি খাতের ঋণ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩% এবং বেসরকারি খাতে ঋণ ১০.৯%। উভয় খাতের মধ্যকার এই ব্যবধান বেসরকারি খাতে কম ঋণ প্রবাহের অন্যতম কারণ। মূল্যস্ফীতি এবং সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, ক্রমবর্ধমান সরকারি উন্নয়ন ব্যয় মেটাতে আর্থিক খাত থেকে ঋণ গ্রহণ বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কাঙ্খিত মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়নি। এছাড়াও, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের উপর অতিরিক্ত চাপ এক্ষেত্রে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে।