সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোম্পানির শেয়ার জব্দের (ক্রোক) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত ২৩ ও ২৬ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।

ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারের ইলেকট্রনিক্স শেয়ার সংরক্ষণাগার সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী, বড় মেয়ে এবং ছোট মেয়ের নামে সকল বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনর্স অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) রাখতে নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সোমবার (২৭ মে) এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা বিএসইসি থেকে পাঠানো হয়েছে বলে সিডিবিএল ও দুদক সূত্রে জানা গেছে। এদিকে বিষয়টি দুদককেও অবহিত করা হয়েছে।

এর ফলে অবরুদ্ধকরণ আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় অর্থ অবরুদ্ধ হিসাবসমূহে জমা করা যাবে না বা কোনও অবস্থাতেই উত্তোলন করা যাবে না।

সূত্রে জানা গেছে, আইএফআইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও ড্রাগন সিকিউরিটিজ লিমিটেডে বেনজীর আহমেদের বিও হিসবি রয়েছে। এচাড়া সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড ও ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার স্ত্রী জিশান মির্জা, ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার বড় মেয়ে ফারহিন রিস্তা বিনতে বেনজীর এবং ডাইনেস্টি সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিও হিসাব রয়েছে।

বিও হিসাব অবরুদ্ধকরণ প্রসঙ্গে বিএসইসির নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কোর্টের সংশ্লিষ্ট আদেশের প্রেক্ষিতে ৫টি ব্রোকারেজ হাউজে ৬টি বিও হিসাব পরবর্তী আদেশ না দেওয়া র্পন্ত অবরুদ্ধ কার নির্দেশ দেওয়া হলো। বিজ্ঞ আদালতের আদশে মোতাবেক উক্ত হিসাবসমূহের ওপর অবরুদ্ধকরণ আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় অর্থ অবরুদ্ধ হিসাবসমূহে কোনো অবস্থাতেই উত্তোলন করা যাবে না।

তথ্য মতে, গত ২৬ মে সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের নামে, তার স্ত্রীর নামে ও মেয়ের নামে থাকা আরও ১১৯টি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে— রাজধানীর গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাটবাড়ি, সাভারের একটি জমি, বাকি ১১৪টি সম্পত্তি রয়েছে মাদারীপুর জেলায়। এর আগে গত ২৩ মে ৮৩টি দলিলের ক্রয়কৃত সম্পত্তি ক্রোক করা হয়। সেই সঙ্গে ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও তার সিকিউরিটিজের (শেয়ার) টাকা অবরুদ্ধ করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ মার্চ একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক মহাপরিদর্শক তার স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার পাশে বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি। অথচ গত ৩৪ বছর ৭ মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদ বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার মতো হওয়ার কথা।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ এপ্রিল পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *