সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোয় বেড়েছে মুরগি, খাসির মাংস ও সবজির দাম। বিশেষ করে গত দুদিনের ব্যবধানে প্রায় প্রতিটি সবজির দাম ১০-২০ টাকা বেড়েছে। এর জন্য সরবরাহ সংকটকে দায়ী করছেন বিক্রেতারা। যদিও শুক্রবার (৭ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে মানভেদে প্রতি কেজি কচুরমুখী ১২০ টাকা, লতি ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০-৮০ টাকা, দেশি গাজর ৭০-৮০ টাকা, চায়না গাজর ১২০ টাকা কাঁঠালের বিচি ৫০-৬০ টাকা, গোল বেগুন ৬০-৮০ টাকা, টমেটো ৯০-১০০ টাকা, ঝিঙ্গা ৫০ টাকা, পটল ৪০-৫০ টাকা, উস্তা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, শসা ১০০-১২০ টাকা, সজনে ডাটা ১০০ টাকা, বরবটি ৯০-১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, কাঁকরোল ৯০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬৫-৭০ টাকা, ধুন্দুল ৬৫-৭০ টাকা, কুমড়া ৩০ টাকা, পেঁপে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা, লেবুর হালি ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, গত দুই দিনের ব্যবধানে প্রায় প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। এর জন্য সরবরাহের ঘটতিকে দায়ী করছেন তারা। মফিজুল ইসলাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, গত দুদিন ধরে সবজির দাম বেশি। চাহিদার তুলনায় বাজারে সবজি কম আসছে। তাই সবজির দাম কিছুটা বাড়তি।
জাকির হোসেন নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, প্রায় প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বাড়ায় সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। আমরা বেশি দামে সবজি আনলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে।
কেজিতে প্রায় ৪-৫ টাকা বেড়েছে আলুর দামও। বর্তামানে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) আলু ২৭০-২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা কয়দিন আগেও ২৫০ টাকা ছিল।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কোল্ড স্টোর মালিকদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন বিক্রেতারা। চাঁন মিয়া নামের এক বিক্রেতা বলেন, কোল্ড স্টোরগুলো থেকে আলু কম ছাড়া হচ্ছে। এতে বাজারে কম বাজারে সংকট দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি তারা দামও বেশি রাখছে। যার কারণে আমাদের বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়।
সবজির দামের এমন ঊর্ধ্বগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে সবজির দাম অনেকটা বেশি। বলা যায়, সবজির দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহের ঘাটতির কথা। কিন্তু বাজারে কোনো জিনিসের অভাব দেখছি না। আমার মতে, পরিবহন খরচ বাড়ায় বাজারে নিত্য পণ্যের দাম বাড়ছে।
এদিকে গত দুই দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি, লাল লেয়ার ও খাসির মাংসের দাম। তবে আগের মতোই আছে গরুর মাংসের দাম।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা দুদিন আগেও ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া ৩২০ টাকায় বিক্রি হওয়া লাল লেয়ার মুরগি আজ বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা কেজি দরে। তবে আগের মতোই ৩২০-৩৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি। সাদা কক বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায় ও সাদা লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায়।
জিয়াউল হক জিয়া নামের এক মুরগি বিক্রেতা বলেন, একে সামনে কোরবানির ঈদ। মুরগির দাম এখন কিছুটা বাড়তি থাকবে। এছাড়া শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এদিন বাজারে সবকিছুর দাম একটু বেশি থাকে।
বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা কয়দিন আগেও ১১০০ টাকা ছিল। তবে গরুর মাংস আগের মতোই ৭৫০-৭৮০ টাকা ও ছাগলের মাংস ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাসির মাংসের দাম বাড়ার জন্য কোরবানির ঈদের কথা বলছেন বিক্রেতারা। আব্দুল মোতালেব নামের এক বিক্রেতা বলেন, কয়েকদিন পর ঈদ। এখন কিনতে গেলে যে খাসির দাম ৫০০০ টাকা হওয়া উচিত, সেটি অন্য আরেকজন ৭০০০ টাকায় কিনে নিচ্ছে। যে কারণে খাসির দাম বেশি পড়ছে।
তবে আগের মতোই আছে পেঁয়াজ, রসুন, ডিমের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি পাবনার পেঁয়াজ ৮০ টাকা, রাজশাহীর পেঁয়াজ ৭৮-৮০ টাকা, ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৭৫-৭৬ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি লাল ডিম ৫০ টাকা ও সাদা ডিম ৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত আছে চালের দাম। প্রতি কেজি মিনিকেট ৬৬-৬৮ টাকা, নাজিরশাইল ৬৫-৮০ টাকা, মোট আটাশ চাল ৫২-৫৩ টাকা, স্বর্ণা (গুটি) ৪৮-৫০ টাকা ও স্বর্ণা (পাইজাম) ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।