নভেম্বর ২৪, ২০২৪

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের শেয়ার দরে পতন অব্যাহত রয়েছে। গত ৫ আগস্টের আগে থেকেই পতন চলছে কোম্পানিটির শেয়ার দরে, যা এখনো চলমান রয়েছে। গত দুই মাসে বেক্সিমকোর শেয়ারে পতন হয়েছে ৪৩ টাকা ১০ পয়সা বা ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, গত ১ আগস্ট বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের দর ছিলো ১০৮ টাকা ৪০ পয়সা। আজ লেনদেন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ৬৫ টাকা ৩০ পয়সা। অর্থাৎ এ দুই মাসে প্রায় ৪০ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে কোম্পানিটির।

এর আগে অবশ্য ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম দেড়শ টাকার ওপরে উঠেছিল। ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের দাম ছিল ১৬৭ টাকা ৮০ পয়সা। বর্তমান মূল্য ওই দামের এক তৃতীয়াংশের কাছাকাছি।

তিন বছর আগে বেক্সিমকো গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডের সুকুক বন্ড ইস্যু করে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্যে কারসাজি করে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকরকম বাড়ানো হয় বলে অভিযোগ আছে। একই সময়ে বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারের দামও অনেক বৃদ্ধি পায়। তবে কোম্পানিটির পারফরম্যান্স বেশ ভাল হওয়ায় এই মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে তেমন প্রশ্ন উঠেনি। সুকুক ইস্যুর পর থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের সব শেয়ারের দাম কমতে থাকে।

এরমধ্যে গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার। এর কিছুদিন পর বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার এবং শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হন।

অন্যদিকে গত ৫ সেপ্টেম্বর এক রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি সংযুক্ত (অ্যাটাচ) করে তা ব্যবস্থাপনায় ছয় মাসের জন্য একজন রিসিভার (সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক) নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানের নেওয়া অর্থ আদায় করতে ও বিদেশে পাঠানো অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সরকার পরিবর্তন ও আদালতের আদেশের পর থেকে বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারে প্রায় নিয়মিত দরপতন হয়েছে।

এদিকে প্রশাসক বসাতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের স্থগিতাদেশ চেয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড একটি আপিল করলে আদালত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ২৮ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক এ আদেশ দেন।

আদালতে লিভ টু আপিলের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান। রিটের পক্ষ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান নিজে শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ফাতেমা এস চৌধুরী। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মুনীরুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদওয়ান আহমেদ রানজিব।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, শুধু রিসিভার নিয়োগের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পক্ষে একটি আবেদন (লিভ টু আপিল) উপস্থাপন করা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত ২৮ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেছেন।

অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী মুনীরুজ্জামান বলেন, সম্পত্তি অ্যটাচ ও রিসিভার নিয়োগ দিতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ স্থগিত চেয়ে আবেদনটি করা হয়। চেম্বার আদালত কোনো স্থগিতাদেশ দেননি। আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে লিভ টু আপিলটি শুনানির জন্য ২৮ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেছেন। ফলে রিসিভার নিয়োগসংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ আপাতত বহাল থাকছে।

হাইকোর্টের আদেশ থেকে জানা যায়, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপ অব কোম্পানিজের অন্য সব ব্যবসাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কী পরিমাণ ঋণ অপরিশোধিত আছে, ঋণের বর্তমান অবস্থা ও রিপেমেন্টের (পরিশোধ) তথ্য দিতে এবং বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি সংযুক্ত (অ্যাটাচ) করে সেসব ব্যবস্থাপনায় রিসিভার (সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক) নিয়োগ বিষয়ে রুল দেওয়া হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...