জুন ২৬, ২০২৪

গত তিনদিন ধরে টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবারও বাড়তে শুরু করেছে ভাটির জেলা সুনামগঞ্জের সব নদ-নদীর পানি। সুরমা, কুশিয়ারাসহ, সীমান্ত এলাকার যাদুকাটা, চলতি নদী, খাসিয়ামারা নদী ও চেলানদী পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে। এতে জেলার বেশ কিছু এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি অনেক গ্রাম পানির নিচে চলে গেছে।

জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৫১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময়ে সুনামগঞ্জে ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে ক্রমাগত সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এরইমধ্যে সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে দোয়ারাবাজারের নিম্নাঞ্চলের লক্ষ্মীপুর, নোয়াপাড়া, রসরাই, সুলতানপুর, হাছনবাহার গ্রাম। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। ডুবে আছে স্থানীয় সড়ক।

গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্ট দিয়ে ৫৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং সুরমা নদীর পানি ছাতক অংশে ৪৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে বন্যা আতঙ্কে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রের উদ্দেশ্য যাচ্ছেন। এছাড়া একই উপজেলার সুরমা ও বোগলা ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামে ঢলের পানি বেড়ে গেছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার শরীফপুর সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় তিন ইউনিয়নের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

জানা যায়, সীমান্তের ওপার থেকে বয়ে আসা খাসিয়ামারা নদীর উপচেপড়া স্রোতে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া, ইদ্রিসপুর, চৌকিরঘাট বেড়িবাঁধ ভেঙে বিভিন্ন হাওরে পানি প্রবেশ করায় ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে। আমনের বীজতলা, আউশ ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বোগলাবাজার ইউনিয়নের ক্যাম্পের গাঁট নামক স্থানে চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

সুরমা ইউনিয়নের টিলাগাও-টেংরাটিলা যাতায়াতের রাস্তা বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে, মহব্বতপুর বাজার-লিয়াকতগঞ্জ বাজার সড়কে নোয়াপাড়া নামকস্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলা সদরের সঙ্গে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ২৮টি ও সুরমা ইউনিয়নের ৫টি গ্রামসহ সীমান্তের লক্ষাধিক মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। বাংলাবাজার ইউনিয়নের পেকপাড়া, চৌধুরীপাড়া, মৌলারপাড়, চিলাইপাড়, পুরান বাঁশতলা গ্রামের অনেক ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বলেন, খাশিয়ামারা নদীর তীব্র স্রোতে আমার ইউনিয়নে নোয়াপাড়া, ইদ্রিসপুর ও চৌকির গাঁট নামক স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে, প্লাবিত হচ্ছে বেশ কিছু গ্রাম। শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানি জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি।

সুরমা ইউপির চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, খাশিয়ামারা নদীর তীব্র স্রোতে সুরমা ইউনিয়নের কিছু সংখ্যক বাড়ি ঘরে পানি উঠেছে। এলাকাবাসীর জন্য শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হবে।

বোগলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিলন খান বলেন, ক্যাম্পেরঘাট গ্রামের সাবেক বিজিবি ক্যাম্পের পাশে চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বোগলাবাজার ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, পুকুরের মাছ ও বাড়ি ঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহের নিগার তনু জানান, সীমান্ত ইউনিয়নগুলোতে উজানের পানিতে বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। কিন্তু শনিবার দুপুরের পর থেকে উজানের ঢল কম থাকায় পানি কমছে। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেওয়া হবে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় ঢল এসে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। টানা বৃষ্টি আর ঢল অব্যাহত থাকলে আজকের মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *