আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পৃথিবী থেকে কমছে সবুজ, গাছ কেটে তৈরি হচ্ছে একের পর এক প্লট, বিশ্ব উষ্ণায়নে গলছে অ্যান্টার্কটিকার হিমবাহ, চড়চড়িয়ে বাড়ছে তাপমাত্রা, পুড়ছে অ্যামাজনের মতো জঙ্গল, জলস্তর বাড়ছে সমুদ্রের। পরিবেশবিদরা বারবার বলছেন, এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য বেশি বেশি করে গাছ লাগান।
৮০০০ গাছ রোপন করে এবং তাদের সন্তান স্নেহে লালন-পালন করেছেন ১১২ বছর বয়সী ‘ভারতের বৃক্ষ-মাতা’ সালুমারাদা থিম্মাক্কা। জন্মসূত্রে কর্ণাটকের তুমুকুরি জেলার বাসিন্দা তিনি। কোনও প্রথাগত শিক্ষা তাঁর নেই, পেশায় দিনমজুর। বিয়ের পর সন্তানাদি না হওয়ায় গাছকেই সন্তান করে নিয়েছিলেন সালুমারাদা। যদিও এই নাম তাঁর বৃক্ষপ্রেমী হওয়ার পরই পাওয়া। জন্মগত সূত্রে তিনি ছিলেন- আলা মারাদা থিম্মাক্কা। পরবর্তীতে তাঁর বৃক্ষ প্রীতি এবং নিরন্তর কাজ তাঁকে ‘সালুমারাদা’ নামই দেয়। যার অর্থ- গাছেদের সাড়ি।
কাজ শুরু করেছিলেন গ্রাম থেকেই। থিমাক্কা এবং তাঁর স্বামী দেখেছিলেন যে তাঁদের গ্রামে অনেক বট গাছ থাকলেও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বট গাছ প্রায় নেই বললেই চলে। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। বট গাছ থেকে চারা কলম বানিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামের কাছে ৫ কিলোমিটার দূরে দূরে বট চারা রোপণ শুরু করলেন তাঁরা। দ্বিতীয় বছরে ১৫টি চারা, তৃতীয় বছরে ২০টি চারা রোপণ করেন। তাঁদের সন্তানস্নেহে লালন করতে প্রতিদিন কিলোমিটারের পর কিলোমিটার যেতেন তাঁরা। এমনকি, চারা অবস্থায় গাছগুলির যাতে ক্ষতি না হয়, বেড়া দিয়ে দিতেন। নিজেদের সঞ্চয় দিয়েই ৩৮৪টি গাছের লালন-পালন করে চলেছিলেন থিমাক্কা। ১৯৯১ সালে মারা যান স্বামী। একা হয়ে পড়লেন থিমাক্কা। পাশে আছে তাঁর গাছেরা। দুঃখকে ভুলে নতুন উদ্যোগে গাছ রোপণ, লালন-পালন, সেবা- শুরু করলেন। বর্তমানে ৮০০০টি গাছের ‘মা’ তিনিই।
সারাজীবনে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন দেশ ও বিদেশের একাধিক সম্মান, পুরস্কার, পদ্মশ্রী।