জুন ২৯, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪। নবমবারের মতো হতে যাওয়া এই আসরে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছে ২০টি দল। প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে যৌথভাবে ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন মুল্লুকে হওয়া এই বিশ্বকাপ রাঙিয়ে রাখতে ব্যক্তিগতভাবে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে প্রতিটি ক্রিকেটারই।

টি-টোয়েন্টি মূলত ব্যাটারদের খেলা হলেও এবারের বিশ্বকাপে এমন বেশ কয়েকজন পেসার আছে; যারা হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেন প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের জন্য। বিশ্বকাপের মঞ্চে গতি, বাউন্স, ইনসুইং, আউট সুইং ও বিধ্বংসী ইয়র্কারে ভেঙে দিতে পারেন ব্যাটারদের উইকেট। সেই সব বোলারদের মধ্যে ছয়জনকে নিয়ে এই প্রতিবেদন। যারা এবারের বিশ্বকাপে ব্যাটারদের হাঁটু কাপাতে পারেন। ঘুম হারাম করে দিতে পারেন ম্যাচের আগে। সেই সব বোলারদের মধ্যে এ তালিকায় রাখা হয়েছে ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহ, পাকিস্তানের শাহিন শাহ আফ্রিদি, নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট, পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির, আফগানিস্তানের ফজল হক ফারুকী ও বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমানকে।

জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত)

সময়ের সেরা পেসারদের সংক্ষিপ্ত তালিকা করলে নিশ্চিতভাবেই জায়গা পাবেন ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহ। সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলে ১৩ ম্যাচে ২০ উইকেট নিয়েছেন বুমরাহ। রানবন্যার এবারের আইপিএলে ওভার প্রতি খরচ করেছেন মাত্র ৬.৪৮ রান। যা প্রশংসা কুড়িয়েছে সকলের। তাছাড়া নিজের দিনে কি করতে পারেন বুমরাহ তা তো কমবেশি সকলেরই জানা। ওভারে ৩-৪ টি নিখুঁত ইয়র্কার করতে পারার সামর্থ্য আছে বুমরাহর। বর্তমান সময়ে তার মতো এমন নিখুঁত ইয়র্কার করার সামর্থ্য খুব কম বোলারেরই আছে। যা এবারের বিশ্বকাপেও আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠতে পারে ব্যাটারদের জন্য। ভারতীয় পেস ইউনিটের মূল শক্তির জায়গা তিনি। এবারের বিশ্বকাপে ভারত কতদূর যাবে সেটাও এক অর্থে নির্ভর করছে বুমরাহর পারফরম্যান্সের ওপর।

শাহিন শাহ আফ্রিদি (পাকিস্তান)

ব্যাটারদের গতি ও সুইংয়ে পরাস্ত করতে শাহিন শাহ আফ্রিদির বিকল্প খুব কমই আছে এই মুহূর্তে। পাকিস্তানের পেস বিভাগের নেতা তিনি। নিজের দিনে প্রতিপক্ষকে একাই গুঁড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন আফ্রিদি। টি-টোয়েন্টিতে ৬৬ ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ৯১টি। সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও পাকিস্তানকে ফাইনালে তুলেছিলেন আফ্রিদি। যদিও ফাইনাল ম্যাচে তিনি চোটে ভোগায় ইংল্যান্ডের কাছে শিরোপা হাতছাড়া করতে হয়েছিল পাকিস্তানকে। কদিন আগেই যা আরও একবার জানিয়েছেন দলটির অধিনায়ক বাবর আজম। কাজেই এই বিশ্বকাপেও যে পাকিস্তান দল নির্ভর করছে শাহিন আফ্রিদির ওপর; তা এক রকম অধিনায়কের কথাতেই পরিষ্কার।

ট্রেন্ট বোল্ট (নিউজিল্যান্ড)

পাওয়ার প্লেতে দ্রুত উইকেট আদায় করে নিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে ওস্তাদ ট্রেন্ট বোল্ট। গতির সঙ্গে ইনসুইং ও আউট সুইংয়ে মুগ্ধতা কাড়তে পারেন তিনি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বকাপ ব্যত্যিত নিউজিল্যান্ডের হয়ে মাঠে নামতে দেখা যায় না তাকে। প্রায় সারা বছরই বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে বেড়ান তিনি। তার সেই অভিজ্ঞতায় এবার পেতে মুখিয়ে নিউজিল্যান্ড। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত ৫৭ ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ৭৪টি। তবে নিজের দিনে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন বোল্ট তা প্রায় বর্তমান সময়ের সব ব্যাটারেরই জানা। সে কারণেই ম্যাচের আগের দিন ট্রেন্ট বোল্টকে নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হতে পারে ব্যাটারদের।

মোহাম্মদ আমির (পাকিস্তান)

পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আমিরকে বলা হয় বড় ম্যাচের প্লেয়ার। নিজেরে অভিষেক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ৬ উইকেট শিকার করে পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ জেতাতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন আমির। মাঝে অবশ্য স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে লম্বা সময় ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন। এরপর ক্রিকেটে ফিরে ২০১৭ সালে ভারতকে হারিয়ে পাকিস্তানকে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতিয়েছেন আমির। সেই তিনি এবার বিশ্বকাপে ফিরেছেন অবসর ভেঙে। জানিয়েছেন তার ক্ষুধাটা বিশ্বকাপের। আর সেই ক্ষুধা মেটাতেই তার অবসর ভেঙে বিশ্বকাপে ফেরা। বড় ম্যাচে চাপ নেওয়ার অদ্ভুদ ক্ষমতা অন্য যে কারো থেকে এগিয়ে রাখবে আমিরকে। নিজের দিনে গতির সঙ্গে সুইংয়ে ব্যাটারদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়তে পারেন তিনি। ম্যাচটা একাই নিজেদের দিকে হেলিয়ে দিতে পারেন বলেই অবসর নেওয়া আমিরকে ক্রিকেটে ফিরিয়েছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। আমিরও নিশ্চয় সেই প্রতিদান দিতেই মুখিয়ে আছেন। আর তা হলে ব্যাটারদের বেশ ধুঁকতেই হতে পারে আমিরের বিপক্ষে।

ফজল হক ফারুকী (আফগানিস্তান)

এরইমধ্যে আফগানদের হয়ে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলে ফেলেছেন ফজল হক ফারুকী। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে নামা উগান্ডাকে একরকম একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এই আফগান পেসার। ৯ রান খরচায় শিকার করেছেন ৫ উইকেট। প্রতিপক্ষ নামেভারে দুর্বল বলেই ছড়ি ঘুরিয়েছেন ফারুকী এমন ভাবলে ভুল করবেন আপনি। পাওয়ার প্লেতে গতির বৈচিত্র দেখিয়ে ব্যাটারদের বিপদে ফেরার অভ্যাসটা ফারুকীর পুরনো। নিজেদের দিনে যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি হয়ে উঠার সামর্থ্য তার আছে। আর সে কারণেই ফারুকীকে খেলার আগে অন্তত উইকেট নিয়ে সর্তক থাকতেই হবে ব্যাটারদের।

মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)

সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলটা দুর্দান্ত কাটিয়েছেন মুস্তাফিজ। চেন্নাইয়ের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন আইপিএল। ৯ ম্যাচে শিকার করেছেন ১৪ উইকেট। আইপিএলকে বিদায় বলার আগ পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার ছিলেন তিনিই। এরপর দেশে ফিরেও দারুণ পাফরর্ম করেছেন ফিজ। নিজের খেলা যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচেও ১০ রান খরচায় ৬ উইকেট শিকার করেছেন ফিজ। তাছাড়া এবারের বিশ্বকাপ যেই ধরণের স্লো উইকেটে খেলা হচ্ছে তা মুস্তাফিজের জন্য আদর্শ। গতির বৈচিত্র এনে স্লোয়ার কাটারে পরাস্ত করতে পারেন ফিজ। যা যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কন্ডিশনে ব্যাটারদের জন্য হয়ে উঠতে পারে মরণফাঁদ। তাছাড়া এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল তাকিয়ে মুস্তাফিজের ওপর। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কত দূর যেতে পারবে সেটিও অনেকাংশে নির্ভর করছে মুস্তাফিজের ওপরই। এমন বোলারের বিপক্ষে নামার আগে তাই নির্ঘুম রান কাটাতেই হতে পারে ব্যাটারদের।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *