দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কারা হবে, তা নির্ধারণ করছে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের অবস্থানের পর বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংসদ সদস্যরা আগামীকাল-বুধবার শপথ নেবেন। আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা ও সংসদীয় নেতা হিসেবে নির্বাচিত করার পর, রাষ্ট্রপতি তাকে নতুন সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন। তারপর নতুন সরকার গঠন হয়ে যাবে। নতুন সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত গঠিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বর্তমান সরকার দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, এ জন্য কোনো সময়সীমা নেই। কিন্তু রীতি হিসেবে শপথ নেয়ার পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে নতুন সরকার ঘোষিত হয় ও শপথ নেন। আমার মনে হয়, এবারও তাই হবে। এটা আমার ধারনা। তবে দিনক্ষণ আমি বলতে পারবো না। প্রথমে নির্বাচন কমিশন নতুন সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশ করবে। তারপর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শপথ নিতে হবে এমপিদের।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের একটি মোর্চা হতে পারে কিনা; প্রশ্নে তিনি বলেন, কেন হতে পারবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি মনে করেন, তারা সরকারের সঙ্গে না থেকে নিজেরা একটা মোর্চা করবেন। অবশ্যই তারা সেটা করতে পারবেন। তখন বিরোধী দল হিসেবে কাকে স্বীকৃতি দেয়া হবে, সেটা জানা যাবে। কিন্তু আমার মনে হয়, বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন প্রয়োজন। স্বতন্ত্রদের যথেষ্ট আসন আছে। ৬২টি আসনে তারা জয়ী হয়েছেন। আমার মনে হয়, আপনাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে বিষয়টি জানার জন্য।
স্বতন্ত্ররাও তো আওয়ামী লীগের, তাহলে বিরোধী দলও কি একই দলের হয়ে গেল না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যারা স্বতন্ত্র নির্বাচিত হয়েছেন, তারা আওয়ামী লীগ হিসেবে নির্বাচিত হননি, তাদের প্রতীকও ছিল ভিন্ন। নৌকা মার্কায় কেবল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। কাজেই স্বতন্ত্ররা আওয়ামী লীগের এটা মুখের কথা হতে পারে, কিন্তু আইনের কথা বা বাস্তবতার কথা সেটা না। তারা যদি স্বতন্ত্র হয়ে জয়ী হয়েছে, তাদের সে স্বাধীনতা আছে, তারা যদি মনে করেন একটা মোর্চা করেন, তখন বিরোধী দল কারা হবেন, তখন নিশ্চিত হওয়া যাবে।
কিন্তু জাতীয় পার্টি তো একটা বিরোধী দল-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি জানি তারা ১১টি আসন পেয়েছে। বিরোধী দল হতে হলে কতটি আসন পেতে হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা আসনসংখ্যা আছে। তবে সেটা এখন বলতে পারছি না জানান আইনমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ২২৪টি আসনে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। আর আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ের হার এবার বেশি। তারা ৬২টি আসনে জয় পেয়েছেন। আর অন্যান্য দল পেয়েছে একটি আসন।
দেশের ২৯৯ আসনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে। দেশের ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি দল ভোটে অংশ নেয়। বিএনপিসহ সমমনা ১৬টি রাজনৈতিক দল ভোট বর্জন করে। স্বতন্ত্র এক প্রার্থীর মৃত্যুতে এক আসনে ভোট স্থগিত করা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে ২২৫টি আসনে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র ৬১টি এবং জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে জয় পেয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা।