ভারতের উত্তর সিকিমে ভারী বর্ষণসহ উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর দেশের অভ্যন্তরে কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে উত্তরের নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। হু হু করে বাড়তে থাকা পানির চাপ সামলাতে ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে সবকটি জলকপাট খুলে রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদী তীরবর্তী কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর জেলার সমতল এলাকার দুইপাড়ের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হওয়ায় স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে কাউনিয়া (লালমনিরহাট) পয়েন্টে ২২১.০ মিলিমিটার, কুড়িগ্রামে ১৬২.০ মিলিমিটার, রংপুরে ১২৯.০ মিলিমিটার, ডালিয়া (নীলফামারী) ১২০.০ মিলিমিটার, পঞ্চগড়ে ১০৬.০ মিলিমিটার, ঠাকুরগাঁওয়ে ১০০.০ মিলিমিটার এবং পাটেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) পয়েন্টে ৭৯.০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
একই সময়ে দেশের উজানে অর্থাৎ ভারতের ধুব্রিতে (আসাম) ১২৩.০ মিলিমিটার, কোচবিহারে (পশ্চিমবঙ্গ) ১০৯.০ মিলিমিটার, জলপাইগুড়িতে (পশ্চিমবঙ্গ) ৮৬.০ মিলিমিটার, গোয়ালপাড়া (আসাম) ৭২.০ মিলিমিটার, শিলিগুড়িতে (পশ্চিমবঙ্গ) ৭২.০ মিলিমিটার এবং কলিমপংয়ে (পশ্চিমবঙ্গ) ৭২.০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বুধবার (১৯ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে কুড়িগ্রামের পাটেশ্বরী (দুধকুমার) পয়েন্টে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৫ সেন্টিমিটার এবং রংপুরের কাউনিয়া (তিস্তা) পয়েন্টে শূন্য দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র নিশ্চিত করে।
পাউবোর নিয়ন্ত্রণকক্ষ জানায়, বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এর আগে সকাল ছয়টায় তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। সকাল নয়টায় একই পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপরে, দুপুর বারোটায় ১৮ সেন্টিমিটার ওপরে এবং বিকেল তিনটায় বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ধরা হয়।
অপরদিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৮৮ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে সকাল ৬টায় যা রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার, সকাল নয়টায় ৫১ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার, দুপুর বারোটায় ৫১ দশমিক ৮৮ এবং বিকেল তিনটায় ৫১ দশমিক ৫১ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার। ডালিয়া পয়েন্টে ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে বিপৎসীমা অতিক্রম করে।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, গজলডোবায় পানি ছেড়ে দেওয়ার কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকাল থেকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তা নদী তীরবর্তী দুই পাড়ের নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্যা মোকাবিলায় সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরে থাকা মানুষজনকে নিরাপদে থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের ঢল আর গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারণে ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডালিয়া ব্যারেজের সব কটি গেট খুলে রাখা হয়েছে। কাউনিয়া পয়েন্টে কিছুটা বাড়ছে পানি প্রবাহ। এ ছাড়া ভাটি অঞ্চলে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, বন্যা মোকাবিলায় সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ জন্য মাঠ পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরে থাকা মানুষজনকে নিরাপদে থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।