জানুয়ারি ৭, ২০২৫

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দলের ঘনিষ্ঠ লোকজনের কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূলে ফ্ল্যাট পাওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ক্রমবর্ধমান তদন্তের মধ্যে রয়েছেন ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জনিয়েছে, কোনোরকম অর্থ খরচ না করেই দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট নেয়ার এই ঘটনায় টিউলিপ সিদ্দিক আরও বেশি চাপে পড়বেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সাথে যুক্ত একজন ডেভেলপারের কাছ থেকে সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি সম্পত্তি উপহার নেয়ার খবর সামনে আসার পর ক্রমবর্ধমান তদন্তের আওতায় আসছেন।

যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথির বরাতে শুক্রবার সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালে লন্ডনের কিংস ক্রসে এলাকার কাছে কোনোরকম অর্থ না দিয়েই ফ্ল্যাট পেয়েছিলিন টিউলিপ। ২০০৪ সালে ফ্ল্যাটটি তাকে দেয়া হয়।

এতে আরও বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) হিসেবে দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০১ সালে ওই ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন আবদুল মোতালিফ নামে এক ব্যক্তি। সেটি ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (বর্তমানে পাউন্ডের বিপরীতে টাকার দর অনুযায়ী যা প্রায় ২ কোটি ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা) দিয়ে কেনা হয়।

ফ্ল্যাটটির বর্তমান দাম নথিতে উল্লেখ করা হয়নি। তবে একই ভবনের আরেকটি ফ্ল্যাট গত আগস্টে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (প্রায় ৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা) বিক্রি হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জানাশোনা আছে এমন একজন ব্যক্তি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফের দুর্দিনে তাকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন টিউলিপের মা-বাবা। তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিজের মালিকানায় থাকা ‘একটি সম্পদ’ টিউলিপকে দিয়েছিলেন।

বর্তমানে আবদুল মোতালিফ দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে বসবাস করেন। ভোটার নিবন্ধনসংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা গেছে, ওই এলাকায় মোতালিফের ঠিকানায় মজিবুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বসবাস করেন। মজিবুলের বাবা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।

আবদুল মোতালিফ ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের কাছে কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাট কেনার কথা স্বীকার করেছেন। তবে পরে সেটি নিয়ে কী করেছেন, তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি।

টিউলিপের ওই ফ্ল্যাট পাওয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার খবর ‘ভুল’ বলে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের কাছে দাবি করেন তার (টিউলিপ) একজন মুখপাত্র।

এর আগে বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৪০০ কোটি পাউন্ড আত্মসাৎ করেন এমন অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে টিউলিপ সিদ্দিক তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...