নভেম্বর ২৫, ২০২৪

কয়লা নিয়ে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে আসছে একের পর এক জাহাজ। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৩০ হাজার টন কয়লা নিয়ে গত বুধবার মোংলা বন্দরে নোঙর করেছে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ ‘বসুন্ধরা ইমপ্রেস’। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রায় ৬০ হাজার টন কয়লা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আরেকটি জাহাজ এসেছে গত মাসে। এ ছাড়া চলতি সপ্তাহেই প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করতে যাচ্ছে আরও দুটি জাহাজ। এসব কয়লা খালাস হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৃষ্ট সংকট কিছুটা হলেও কাটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে শিল্পকারখানার উৎপাদনও যুক্ত। কয়লার অভাবে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কারখানাতেও উৎপাদন ব্যাহত হয়। এখন আবার কয়লা আসতে থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।

রড উৎপাদনকারী শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাতের এএমডি আলমাস শিমুল বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় আমাদের কারখানায় জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কয়েকদিন বন্ধ ছিল। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি। তবে গত ১৭ মে থেকে আবার জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পাচ্ছি আমরা। বিদ্যুৎ সরবরাহ কথায় কথায় বন্ধ না করলে আমাদের উৎপাদন স্বাভাবিক থাকবে।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা নিয়ে মোংলাতে নোঙর করা জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট টগি শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিক। প্রতিষ্ঠানটির খুলনা শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক খন্দকার রিয়াজুল হক জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে বন্দরের হারবারিয়া ৮ নম্বর বয়ায় ৩০ হাজার টন কয়লা নিয়ে বসুন্ধরা ইমপ্রেস জাহাজটি নোঙর করে। এরপর সেখান থেকে ছোট লাইটারে কয়লা খালাস করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে। এই জাহাজ থেকে এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয় ১৯ হাজার ৫০০ টন কয়লা। সেই কয়লা এরই মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩৩ হাজার টন কয়লা নিয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি এসেছিল পানামার পতাকাবাহী এমভি স্পাইনেল নামে আরও একটি জাহাজ।

কয়লা সংকটে গত ২৩ এপ্রিল রাত থেকে উৎপাদন বন্ধ ছিল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে। নতুন করে কয়লা আসায় এখন সেটি আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) উপব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম। তিনি বলেন, নিয়মিত ৫৬০ থেকে ৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছিল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে ৪৬০ মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে ও ২০০ মেগাওয়াট খুলনা-বাগেরহাটে সরবরাহ করা হতো। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিয়মিত উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৫ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয়।

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা জাহাজের স্থানীয় শিপিং এজেন্ট জিপি শিপিং লাইন্স লি. (জিপিএসএল)। প্রতিষ্ঠানটির সিইও হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, আরও ৬০ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরেকটি জাহাজ আগামী ২৪ মে বন্দরে নোঙর করবে। চলতি মাসের মধ্যে এসব কয়লা খালাস করার কথা মাতারবাড়ীতে। গত মাসেও প্রায় ৬০ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরেকটি জাহাজ নোঙর করেছিল মাতারবাড়ীতে। আগামী এক মাসে কয়লা বোঝাই আরও দুটি জাহাজ দেশে আসার কথা রয়েছে। পাইপলাইনে থাকা এসব জাহাজ নির্ধারিত সময়ে নোঙর করলে কয়লা সংকট কিছুটা হলেও কাটবে বলে মনে করছি। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এখন থেকে প্রতি মাসে কয়লা নিয়ে দুটি জাহাজ আসবে চট্টগ্রাম বন্দরে। এসব কয়লা মাতারবাড়ীর জেটিতে নিয়ে খালাস করা হবে। এভাবে অন্তত ৩০টি জাহাজের কয়লা মজুত করা হবে মাতারবাড়ীতে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...