নভেম্বর ১৫, ২০২৪

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের অভিযোগ। সেটাও একযুগের কম না। কিন্তু হঠাৎ করে গত দুই-একদিন ধরে প্রতিবাদি হয়ে উঠেছে বিএসইসির কর্মকর্তারা। যারা গতকাল (১৩ আগস্ট) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিয়োগ দেওয়া চেয়ারম্যান ড. এম. মাসরুর রিয়াজের বিষয়েও বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন এবং তাকে চান না বলে জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তার নিয়োগ বাতিলের দাবি তুলেছেন।

কিন্তু এই দাবির পেছনে বিএসইসির একজন সিনিয়র নির্বাহী পরিচালক (ইডি) এবং একজন কমিশনারের চক্রান্ত রয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিএসইসির অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ব নির্ধারিত সভায় মাসরুর রিয়াজকে চেয়ারম্যান হিসেবে চান না কিনা এমন প্রস্তাবে উপস্থিত প্রায় সবাই হাত তুলে অসম্মতি জানিয়েছেন।বিএসইসির ওইসভা শুরুর আগে উপসচিব ফরিদা ইয়াসমিন সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে মাসরুর রিয়াজকে ৪ বছরের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো, সাইফুর রহমান। এতে নির্বাহি পরিচালক মাহবুবের রহমান চৌধুরী, কামরুল আনাম খান, রেজাউল করিমসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পরিচালক, উপ-পরিচালক ও সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

মাসরুর রিয়াজের বিষয়ে সভায় বলা হয়, মাসরুর রিয়াজ শেয়ারবাজারের লুটেরা এবং সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ঠ ও বিগত কমিশনের সঙ্গে সর্ম্পক্য রয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। এতে বলা হয়, মাসরুর রিয়াজ সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মিলে অনেক কাজ করেছেন। এছাড়া বিগত কমিশনের সঙ্গে রোড শোতে অংশগ্রহণ করেছেন। তবে বিএসইসির কর্মকর্তারা একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান চায়। যা মাসরুর রিয়াজ না। যাকে কমিশনে যোগদানকে কর্মচারীরা স্বাগত জানাবে না। যার নিয়োগের প্রজ্ঞাপনকে বাতিল করার দাবি সভায় তোলা হয়।

এই দাবির পেছনে অনেকে ষড়যন্ত্র দেখছেন। এ বিষয়ে ডিএসইর পুরাতন এক ট্রেকহোল্ডার জানান, মাসরুরকে না চাওয়ার পেছনে প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে একজন সিনিয়র নির্বাহি পরিচালকের কমিশনার হওয়া ও একজন কমিশনারের চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন বিফলে যাওয়া। যদিও এখনো ২টি কমিশনার পদ খালি রয়েছে। এছাড়া আওয়ামীলীগ সরকারের নিয়োগ দেওয়া ২ জন কমিশনার এখনো রয়েছেন। যাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। কারন এরইমধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের নিয়োগ দেওয়া চেয়ারম্যান ও ২ জন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন নিজেদের সম্মান বজায় রাখতে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ নিয়োগ বাতিল বা পদত্যাগে বাধ্য করতে না পারে।

ডিএসইর আরেক সিনিয়র ট্রেকহোল্ডার বলেন, বিএসইসিতে চেয়ারম্যান নিয়োগকে নিয়ে গতকাল সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে কাজ করেছে, তা তারা করতে পারে না। এতে বিএসইসির কাঠামো ঠিক থাকবে না। যারা প্রতিবাদ করেছে চেয়ারম্যান নিয়োগের, তারাও কিন্তু অনিয়মে জড়িত এবং রোড শোতে অংশ নিয়েছে। এখন নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার না হওয়ায় মাসরুরকে নিয়ে গতকাল প্রতিবাদ করেছে। অথচ এরাই দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোসহ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করে আসছে অন্যায়ভাবে।

উল্লেখ্য, ড. এম. মাসরুর রিয়াজ ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা। তিনি বর্তমানে পলিসি এক্সচেঞ্জ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। উনার পিতা প্রয়াত সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। যিনি প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...