লা লিগার চ্যাম্পিয়ন ট্রফি হাতে পাওয়ার এখনও চারদিনও হয়নি বার্সেলোনার। কিন্তু এরই মধ্যে টানা দুটি ম্যাচে হার দেখেছে কাতালান ক্লাবটি। অব্শ্য এর আগের পরাজয়ের ম্যাচটি ছিল জাভি হার্নান্দেজদের কাছে লিগের ট্রফি হস্তান্তরের আগমুহূর্তে। ট্রফি হাতে পাওয়ায় হয়তো নিয়মরক্ষার এসব ম্যাচে তেমন গুরুত্ব নেই বার্সার কাছে। তাই বলে রেলিগেশনের ঝুঁকিতে থাকা রিয়াল ভায়াদোলিদের কাছে হেরে যাবে! এদিন ঘরের বাইরে ৩-১ গোলের বড় ব্যবধানে হেরেছে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা।
মঙ্গলবার (২৩ মে) ভায়াদোলিদের মাঠে খেলতে নামার আগে বর্ণবাদী আচরণে বিরুদ্ধের প্রতিবাদ জানান দু’দলের ফুটবলাররা। ‘র্যাসিস্ট, আউট অফ ফুটবল’ স্লোগানে তারা সম্প্রতি রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়াস জুনিয়রের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দেন।
এদিন শুরু থেকেই নড়বড়ে ডিফেন্স ছিল বার্সার। তাই তো গোল পেতে স্বাগতিকদের তেমন কষ্ট করতে হয়নি। ম্যাচের মাত্র ৮২ সেকেন্ডের মাথায় তারা গোল পেয়ে যায়। আগেই তিন গোলে পিছিয়ে থাকা বার্সা শেষদিকে গিয়ে কেবল একটু ব্যবধান কমায়। যা লা লিগায় টিকে থাকার আশা বাঁচিয়ে রেখেছে ভায়াদোলিদের।
গত ১৪ মে এস্পানিওলকে হারিয়ে তিন মৌসুম পর জাভির দল শিরোপা নিশ্চিত করে। এর ১০ দিনের ভেতর তাদের গোলক্ষুধা ও জয়ের তাড়না কমে হারতে হয়েছে পরবর্তী দুটি ম্যাচে। ম্যাচের দুই মিনিট না যেতেই বার্সা ডিফেন্ডার আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেন আত্মঘাতি গোল করে বসেন। আন্দ্রে টের স্টেগানের কিছুই করার ছিল না। মূলত প্রতিপক্ষ ফুটবলারের শট ফেরাতে গিয়েই ক্রিস্টেনসেনের তৈরি করা এমন দৃষ্টিকটু মুহূর্তের স্বাক্ষী হয় সফরকারীরা।
এরপর আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে ভায়াদোলিদ। পরের ১০ মিনিটে তারা আরও কয়েকটি ভালো আক্রমণ করে। বার্সেলোনা প্রথম উল্লেখযোগ্য আক্রমণ শাণাতে পারে ত্রয়োদশ মিনিটে। কিন্তু রাফিনিয়ার কোনাকুনি শট গোলরক্ষককে এড়াতে পারেনি। উল্টো সদ্য চ্যাম্পিয়নদের স্তব্ধ করে দিয়ে ২২তম মিনিটে স্পট কিকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কাইল ল্যারিন। ডি-বক্সে গনজালো প্লাতাকে বার্সেলোনা ডিফেন্ডার এরিক গার্সিয়া ফাউল করলে স্বাগতিকরা পেনাল্টি পায়।
দুই গোল খেয়ে কিছুটা হুশ ফেরে বার্সার। এরপর যেন তেতে ওঠে পরপর দুই মিনিটে তারা দারুণ সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় রুখে দেন জর্ডি মাসিপ। এই গোলরক্ষক প্রথমে ৩১তম মিনিটে ক্রিস্টেনসেনের জোরালো হেড ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান। ওই কর্নারের ফলশ্রুতিতে রবার্ত লেভান্ডফস্কির শটও মাসিপ একইভাবে ঠেকিয়ে দেন।
পরের অর্ধেও ভায়াদোলিদ খেলতে থাকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। দারুণ সব আক্রমণে চেষ্টা করতে থাকে গোল ব্যবধান আরও বাড়ানোর। বার্সেলোনা চেষ্টা করেও সুবিধা করতে পারছিল না। ৫৯তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত স্বাগতিকদের। ডান দিক থেকে মাচিসের ক্রস টের স্টেগানকে ফাঁকি দিয়ে দূরের পোস্টে লাগলে বেঁচে যায় বার্সেলোনা।
৭৩তম মিনিটে কাতালোনিয়া শিবিরের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা অনেকটাই শেষ হয়ে যায়। দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে স্কোরলাইন ৩-০ করেন প্লাতা। গতিতে সবাইকে পেছনে ফেলে ডি-বক্সে ঢুকে ল্যারিন পাস বাড়ান বাঁয়ে, প্রথম ছোঁয়ায় জোরালো শটে টের স্টেগানকে পরাস্ত করেন ইকুয়েডরের মিডফিল্ডার প্লাতা। শুরুতে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি, তবে ভিএআরে সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। পাঁচ মিনিট পর আরেকটি সুযোগ পায় ভায়াদোলিদ। তবে লুকাস রোসার শট গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বাধা পায় পোস্টে। খানিক পর প্লাতার হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
ম্যাচে তখন নিশ্চিত হারের দিকে আগাচ্ছিল বার্সা। অবশেষে তার আগে ব্যবধান কিছুটা কমায় ৮৪তম মিনিটে। ফ্রেংকি ডি ইয়ংয়ের থ্রু পাস ধরে বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে কাটিয়ে দুরূহ কোণ থেকে শটে বল জালে পাঠান লেভান্ডফস্কি। নাটকীয়তার ইঙ্গিত থাকলেও বাকি সময়ে আর তেমন কিছুই করতে পারেনি কাতালান ক্লাবটি। তবে সান্ত্বনার এই গোলে লা লিগায় অভিষেক মৌসুমেই পিচিচি ট্রফি জয়ের দৌড়ে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন লেভান্ডফস্কি। ৩১ ম্যাচে তার গোল ২২টি। দুইয়ে থাকা করিম বেনজেমার গোল পাঁচটি কম।
৩৬ ম্যাচে শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার পয়েন্ট ৮৫। ৭২ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ। আর রিয়াল মাদ্রিদের পয়েন্ট ৭১। মাদ্রিদের দল দুটি একটি করে ম্যাচ কম খেলেছে।