২০২৪-২৫ অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করার বিশেষ সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, কোনো করদাতা স্থাবর সম্পত্তি যেমন- ফ্ল্যাট ও জমির জন্য নির্দিষ্ট করহার এবং নগদসহ অন্যান্য সম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকারের প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না।
পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে সর্বাধিক ২০ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা সরাসরি বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈধ করা হয়েছিল। ওই অর্থবছরেও ৯৮ শতাংশ করদাতা বিভিন্ন আমানত, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র বা নগদ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে ঘোষণার মাধ্যমে সাদা বা বৈধ করার সুযোগ নিয়েছেন।
চার বছর বিরতির পর সাধারণ ক্ষমার আওতায় আগামী অর্থবছরে ফেরত আসতে পারে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার করার সুযোগ। এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করে যে কেউ কালো টাকা টাকা সাদা করার সুযোগ পাবে, আগামী বাজেটে এমন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাবনা থাকছে। অ্যামনেস্টি বা সাধারণ ক্ষমাসহ এ সুযোগ দেওয়ার ফলে অর্থের বিষয়ে কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না।
অন্যদিকে বর্তমানে ব্যক্তি করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ, যা আগামী অর্থবছরে ৩০ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে এনবিআর। বর্তমানে আয়কর আইন অনুযায়ী, যেকোন করদাতা সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কর দিয়ে এরসঙ্গে ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিতে পারে। তবে অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ রয়েছে। যে কোনো সংস্থা চাইলে পরবর্তী সময়ে ওই টাকার উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারবে।
স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে। কিন্তু তেমন উল্লেখযোগ্যভাবে সাড়া না পাওয়ায় এসব উদ্যোগের বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছে। কারণ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে এসব অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রাখা হয়েছিল। কালো টাকা সাদা করার সময় বা এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরে কেউ যেন অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তুলতে পারে, এজন্য ২০২০ সালে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করে এনবিআর।
২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ২০ হাজার ৬৫০ কোটি অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ বা সাদা হয়। যেখানে ১১ হাজার ৮৫৯ জন করদাতা কালো টাকা বৈধ করেছেন। যা দেশের স্বাধীনতার পর থেকে এক বছরের হিসাবে সর্বোচ্চ পরিমাণ। যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি ব্যাংকে রাখা বিভিন্ন আমানত, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র বা নগদ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন।
এনবিআর সূত্র বলছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেয়ারবাজার, নগদ টাকা কিংবা জমি-ফ্ল্যাট কিনে সব মিলিয়ে ১১ হাজার ৮৫৯ জন কালোটাকা সাদা করেছেন। এর মধ্যে শুধু জুন মাসেই এক হাজার ৪৫৫ জন ব্যক্তি কালো টাকা সাদা করেছেন ৬১৯ কোটি টাকা। কালো টাকা বিনিয়োগকারীর মধ্যে ৭ হাজার ৫৫ জন ব্যক্তি ব্যাংকে রাখা বিভিন্ন আমানত, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র বা নগদ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করেছেন। তারা সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আইনগতভাবে বৈধ করেছেন।
আর ২০২১-২২ অর্থ বছরে আয়কর অধ্যাদেশের ১৯(এএএএএ) ধারায় অপ্রদর্শিত অর্থ সরাসরি ঘোষণা নিয়ে বৈধ করেছেন ২ হাজার ২৫১ জন করদাতা। যার পরিমাণ হলো ১ হাজার ১২৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহণকারীদের মধ্যে ৯৭ শতাংশের বেশি করদাতা সরাসরি কর দিয়ে বৈধ করেছেন। ওই সময়ে বিদেশে যে কোনোভাবে আয় করা অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈধভাবে দেশে আনা যাবে। মাত্র ৭ শতাংশ কর দিলেই ওই অর্থ বৈধ হবে এবং আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করা যাবে। যদিও বিদেশ থেকে কোনো অর্থ ওই সময়ে দেশে আসেনি।
এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় সব সরকারই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের পর বেশি অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগে এসেছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। তখন দেশের পরিস্থিতি ছিল একেবারেই ভিন্ন। ওই দুই বছরে ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ নিয়েছিল; বৈধ হয়েছিল ৯ হাজার কোটি টাকা। তা থেকে সরকার কর পেয়েছিল এক হাজার ২০০ কোটি টাকার কিছু বেশি। এর মধ্যে ২০০৭ সালে ৮০৩ কোটি টাকা এবং পরের বছর ৪০০ কোটি টাকা কর পেয়েছিল এনবিআর।