সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪

বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। দেশটি বলেছে, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আমেরিকা-ইউরোপ বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন। প্রথম প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র কি অবগত, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থনের কারণে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অসম্ভব?’

একইসঙ্গে দ্বিতীয় প্রশ্ন করে ওই সাংবাদিক বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল (মঙ্গলবার) সংবাদ সম্মেলনে কিছু উত্তেজক ও অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন, যা ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশ্বের খুব কম মানুষই শেখ হাসিনার শারীরিক ভাষা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ বোঝেন। তিনি একই কাজ করেছিলেন ২০১৮ সালে, যখন তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সা বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা হয়েছিল। এবারও তিনি সংবাদ সম্মেলনে বসে একই ধরনের ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছেন।’

জবাবে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য সরকারের কাছে যেমনটা আশা করে, বাংলাদেশ সরকারের কাছেও তেমনটা আশা করে। আর তা হচ্ছে—তারা কূটনীতিকদের সুরক্ষায় ভিয়েনা কনভেনশনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলবে।’ খবর এনটিভি

আগের দিন সোমবার প্রেস ব্রিফিংয়ে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে মুখপাত্র মিলার বলেন, ‘অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সব রাজনৈতিক দল, ভোটার, সরকার, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমসহ সবার। বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই। তা হলো, বাংলাদেশে যাতে শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধীদের সংলাপে বসার ব্যাপারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আহ্বানের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সংলাপ করেন, তাহলে শেখ হাসিনা বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ করবেন। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো সংলাপে বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি ও তার প্রশাসন বিরোধীদের প্রতি খুবই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। গতকাল পুলিশের হাতে বিরোধী দলীয় দুই নেতা নিহত হয়েছেন। বিরোধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকায় দুই শীর্ষ বিরোধী নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিদিনই তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হতে পারে বলে কি মুখপাত্র মনে করেন?’

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘প্রশ্নের প্রথম অংশ নিয়ে মন্তব্য নেই।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আগে যে লক্ষ্যগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা অর্জনের জন্য সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ।’

জবাবে মিলার আরও বলেন, তারা বাংলাদেশের নির্বাচনি পরিবেশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা সহিংসতার ঘটনাগুলো খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। তারা সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। এই সম্পৃক্ততা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে, শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে সবাই যাতে একত্রে কাজ করেন, সেজন্য তারা সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন, সম্পৃক্ত হচ্ছেন।

ব্রিফিংয়ে আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সারা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে। বিরোধী দল বিএনপি সারা দেশে সড়ক, রেলপথ অবরোধের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে আরও সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিএনপি আসন্ন সাধারণ নির্বাচন বানচালের জন্য সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে বলে দেশবাসী মনে করে। পুলিশ কর্মকর্তাদের হত্যাকারী, প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুরকারী ব্যক্তিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র কি ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবে?’

জবাবে মিলার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে ভিসা বা অন্য কোনো নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন না। তবে দেশটি বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি, এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।’

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *