নভেম্বর ২৩, ২০২৪

অলিখিত নকআউটে পাকিস্তান জিতলো। বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগ হাতছাড়া হলো। সাকিব আল হাসানদের ৫ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনালে বাবর আজমরা। শুরুতে অ্যাডিলেডের সবুজ গালিচায় বাংলাদেশ টস জিতে নেমে ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে তুলল ১২৭ রান। জবাবে পাকিস্তান ১৮তম ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে পা রাখে সেমিফাইনালে।

১৯তম ওভারের প্রথম বলে শান মাসুদ দৌড়ে দুটি রান নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন। ১৪ বলে ২৪ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। এর আগে ৫৭ রানের উদ্বোধনী জুটিতে বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান জয়ের ভিত গড়ে দেন। পাকিস্তানের পক্ষে ইনিংস সেরা ৩২ রান করেন রিজওয়ান, মোহাম্মদ হারিসের ব্যাট থেকে আসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান।

১২৮ রানের লক্ষ্যে নেমে ১৮.১ ওভারে ৫ উইকেটে জিতে যায় পাকিস্তান। বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে ১২৭ রানে আটকে রাখতে বড় অবদান রাখেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা পাকিস্তানের এই পেসার।

এই জয়ে ৫ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ভারতের সঙ্গে গ্রুপ-২ থেকে দ্বিতীয় সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে নিজেদের জায়গা চূড়ান্ত করলো পাকিস্তান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শীর্ষে ওঠার লড়াইয়ে বেলা ২টায় মাঠে নামবে ভারত। রোহিত শর্মারা সমান ৬ পয়েন্ট নিয়ে নেট রানরেটে দ্বিতীয় স্থানে। দক্ষিণ আফ্রিকার হারে এই গ্রুপ থেকে ভারত প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে।

এর আগে রোববার টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন সাকিব আল হাসান। আর জানিয়ে দেন দলে ৩ পরিবর্তন। ভারতের বিপক্ষে হেরে যাওয়া দলে তিনটি পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। একাদশে ফিরেন সৌম্য সরকার। প্রথমবারের মতো এই বিশ্বকাপে জায়গা মেলে নাসুম আহমেদ ও ইবাদত হোসেনের। বাদ পড়েন ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি চৌধুরি এবং দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলাম।

আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ব্যাটে ঝড় তুলেছিলেন লিটন দাস। সেই ম্যাচেই অবশ্য হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েন। দু’দিন অবশ্য অনুশীলন করতে পারেন নি। তবে মাঠে নেমেই আগের ম্যাচের মতো মারদাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। দারুণ এক পুলে ছক্কা হাঁকান লিটন দাস। কিন্তু এরপরই শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে সর্বনাশ। ৬ বলে এক ছক্কায় ১০ রান করেন লিটন দাস।

তবে অন্যপ্রান্তে নাজমুল হোসেন শান্ত লড়ে গেছেন। তার পথ ধরেই প্রথম ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশ তুলে ১ উইকেটে ৭০ রান। তখন ১৫ বলে ১৮ সৌম্য সরকার। নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৭ বলে ৪১ রানে।

তারপর নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার পথ দেখান দলকে। দু’বার জীবন পেয়ে হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন শান্ত। মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রের বলে কাভারে ক্যাচ দেন তিনি। তবে রক্ষা, সেই ক্যাচ নিতে পারেননি শাদাব খান। তখন তিনি ১১ রানে। সেই জীবন পেয়ে ৫৪ রান করেই থেমেছেন লিটন। খেলেছেন ৪৮ বল।

সৌম্য সরকারও যেতে পারেননি বেশি দূর। দলে ফেরা এই ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যান থামেন ১৭ বলে ২০ রানে। শান্তর সঙ্গে গড়েন ৫২ রানের জুটি। বাংলাদেশও পড়ে যায় বিপদে। তবে আম্পায়ারের একটা ভুল সিদ্ধান্তেই সর্বনাশ। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ভুল সিদ্ধান্তে আউট। আম্পায়ারের চমকে যাওয়া বাজে সিদ্ধান্ত গেল বাংলাদেশের বিপক্ষে।

এগিয়ে এসে লেগ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু এলবিডব্লিউ। যদিও পাকিস্তানের আবেদনে আম্পায়ার অনেক দেরিতে সিদ্ধান্ত জানান। তারপর রিভিউ নিতে ভুল করলেন না সাকিব। ব্যাটে বল লেগেছে এমনটাই আঁচ করা যাচ্ছিল। রিপ্লেতে ব্যাটে বলের হালকা স্পর্শ হয়েছে এমনটা দেখা যায়। ব্যাট মাটির কাছে ছিল। এ অবস্থায় ব্যাট মাটিতে লেগেছে স্থীর থেকে তৃতীয় আম্পায়ার আউটের পক্ষেই রায় দেন।

অথচ এটি আউট ছিল না। সাকিব হতাশ হয়ে ফেরেন প্রথম বলেই। দল পড়ে যায় ভয়াবহ চাপে! তারপর আর কিছুই হলো না। এমন একটা শুরুর পর শেষটাতে এসে শুধুই হতাশার গল্প। মোসাদ্দেক হোসেন ১১ বলে ৫। নুরুল হাসান সোহান ৩ বল খেলে শুন্য, শাহীন শাহ আফ্রিদি ফেরান তাসকিনকে (১)। শেষটাতে ২০ বলে ২৪ রান করায় কিছুটা হলেও সম্মানজনক পুঁজি পায় বাংলাদেশ। এই ইনিংস খেলার পথে আফিফ তার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে হাজার রান ক্লাবে পা রাখলেন! শাহিন শাহ আফ্রিদি ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। তিনিই শেষ করে দেন টাইগারদের লাইনআপ!

তবে নিশ্চিত করেই ১২৭ রানের সংগ্রহ হতাশাজনক। যেখানে প্রথম ১০ ওভারে দল তুলেছিল ৭০ রান, সেখানে পরের ১০ ওভারে মাত্র ৫৭! ১২০ বলের ক্রিকেটে ৫৫ বল ডট। বিস্ময়কর! এই পুঁজি নিয়ে আর যাই হোক লড়াই করতে পারেন না বোলাররা। তারপরও দুই জয়ে এটিই হয়ে থাকল বাংলাদেশের সেরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...