অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে সৃষ্ট সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের বিভিন্ন জেলায় ৩,৩৪৬ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সাম্প্রতিক বন্যায় ২৩ জেলার ফসল উৎপাদন ও ১৪.১৪ লাখেরও বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব অনুযায়ী— আউশ, আমনের ধান, শাকসবজি, আদা, হলুদ, ফলবাগান, মরিচ, পান, তরমুজ, পেপে, টমেটোসহ বিভিন্ন ফসলের ৯ লাখ ৮৬ হাজার ২১৪ মেট্রিক টন ফসলের উৎপাদন একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ধানের উৎপাদনে। আমনের আবাদ ও বীজতলার যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা থেকে ৬ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন ধান পাওয়া যেত, যা পুরোপুরিই নষ্ট হয়ে গেছে। এর বাইরে প্রায় ১ লাখ সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন আউশ ধানের উৎপাদন নষ্ট হয়েছে। সবমিলিয়ে ২ হাজার ৫১৯ কোটি টাকার ধানের উৎপাদন নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে দেখা গেছে, বন্যা আক্রান্ত ২৩ জেলায় বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়েছিল ১৪ লাখ ৩০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে। গড়ে এই ফসলের ১৪.৫৮ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতির এই তালিকায় আমন-আউশ ধানের পরই রয়েছে শাকসবজি। বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপাদনের ১ লাখ ৭৬ হাজার মেট্রিক টন নষ্ট হয়েছে— যার মূল্য প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।
ভয়াবহ এই বন্যার পর, কৃষি পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে নতুন করে অমন চাষে।
কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কৃষি পূনর্বাসন। যে কারণে ফসল নষ্ট হওয়া জমিগুলো দ্রুত চাষের আওতায় আনতে কাজ শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই।
এই কার্যক্রমের আওতায় ১৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার আশপাশে দ্রুত আমনের বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে— যা দিয়ে পুনরায় আমনের আবাদ করা হবে।
কৃষিসচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, “সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আমনের বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। যাতে করে আমনের যেসব জমির চাষ নষ্ট হয়েছে, সেখানে পুনরায় আমন রোপন করা যায়।”
এছাড়া শাক-সবজিসহ অন্যান্য জমিগুলোতেও চাষাবাদ ফিরিয়ে আনতে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগীতা দেওয়ার জন্য কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত ২৪ আগস্ট, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সব বিভাগের সঙ্গে একটি সভা করেন। সেখানে কৃষি পূনর্বাসনের জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এছাড়া, ২০ কোটি টাকা মূল্যের আদা, ১১ কোটি টাকার হলুদ, ১৭ কোটি টাকার আখ, ৪০ কোটি টাকার পান, কলাসহ অন্যান্য ফলের ৩১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, মৎস ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর হিসাব করে দেখেছে— বন্যায় মাছ, মাছ চাষের অবকাঠামো এবং লাইভস্টক সেক্টরের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে, এখনো প্রায় ৭ লাখ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে, যেখানে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ জনে এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরও একজন।