ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে দেশের পুঁজিবাজারকে সামাল দিতে গত বছরের ২৮ জুলাই পুনরায় ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের দামের সর্বনিম্নসীমা) আরোপ করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৬৯টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয় কমিশন, যা এখনও বহাল রয়েছে। এ বর্তমান পরিস্থিতে ফ্লোর প্রাইস বহাল রেখেও পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক এবং শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী।

তিনি মনে করেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নগদে জমা ও উত্তোলনের সুবিধা প্রদান করা, বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা, ফ্লোর প্রাইসের আটকে থাকা কোম্পানিগুলোর মালিক পক্ষের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো, বিএসইসির নেতৃত্বে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের উদ্যোগ গ্রহণ এবং গুজবে কান দিয়ে আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি না করলেই অচিরেই কোম্পানিগুলোর শেয়ার ফ্লোর প্রাইস থেকে বেড়িয়ে আসবে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করেছে। আশা করা যাচ্ছে শিগগরিই আরো কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইস থেকে অতিক্রম করবে।

সম্প্রতি পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে তিনি এ প্রত্যাশার কথা জানান।

শাকিল রিজভী বলেন, কিছুদিন আগেও বিনিয়োগকারীরা সর্বোচ্চ ৫ লাখ নগদ টাকা জমা দিতে পারতেন। তবে কিছু অসাধু ব্রেকারেজ হাউসে আর্থিক লেনদেনের অস্বচ্ছতা কমিশনের নজরে আসায় নগদে লেনদেনের সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বল্প পরিসরে হলেও দ্রুত তারল্য প্রবাহ বাড়ানো খুবই জরুরি। একজন বিনিয়োগকারীর জরুরি প্রয়োজনে হঠাৎ অর্থের প্রয়োজন হলে তিন দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ ধরণের প্রতিবন্ধকতা শিগগিরই দূর করতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে নগদ চেকের মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধা ফিরিয়ে আনতে হবে।

ডিএসইর পরিচালক বলেন, ইদানিং কিছু কোম্পানির বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার পর শেয়ারের দাম বাড়তে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লভ্যাংশ ঘোষণাজনিত রেকর্ড ডেটের পরে বোনাস লভ্যাংশ চূড়ান্ত অনুমোদনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি না পেয়ে তা বাতিল হচ্ছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তাই সমস্যা দূর করতে কোনো কোম্পানির বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার আগে তাদের কমিশনের অনুমতি নেওয়ার বিধান রাখা জরুরি। এতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, শুধুমাত্র পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করাই মালিক পক্ষের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ নয়। পুঁজিবাজারের সংকটে নতুন বিনিয়োগ নিয়ে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে নিজেদের কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা নির্ধারণ করে দাম ধরে রাখা উচিত। সেক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানিগুলোর লেনদেন বাড়তে থাকবে। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদেরও আস্থা ফিরে আসবে। পাশাপাশি পুঁজিবাজার টিকে থাকতে কোম্পানিগুলোকে স্বউদ্যোগে ব্যবসার সম্প্রসারণের কথা ভাবতে হবে। একইসঙ্গে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে মালিক পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।

শাকিল রিজভী আরো বলেন, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে কমিশনের আরও কঠোর হতে হবে। কারণ পুঁজিবাজারের উত্থান-পতন ঘটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ফান্ডামেন্টাল ভ্যালুর ওপর। এ জন্য পুঁজিবাজারকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে আর্থিক প্রতিবেদনে কারসাজি বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা যায়, মালিক পক্ষকে বিশেষ সুবিধে দিতে আর্থিক প্রতিবেদন নিজেদের মতো তৈরি করা হয়ে থাকে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি করে। তাই এ ধরনের কর্মকাণ্ড অচিরেই বন্ধ করতে হবে।

পুঁজিবাজারের এ বিশেষজ্ঞ বলেন, মিথ্যে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্যের ভিত্তিতে অযথা স্বল্প মূল্যে শেয়ার বিক্রি করা থেকে বিনিয়োগকারীদের সরে আসতে হবে। কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল ভ্যালু যদি শক্তিশালী থাকে তাহলে শেয়ারের দাম আজ অথবা কাল বাড়বেই। বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...