ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪

অস্থির হয়ে ওঠেছে মাংসের বাজার। রাজধানীতে আবারও বাড়ছে গরু ও মুরগির মাংসের দাম। পাশাপাশি ঊর্ধ্বমুখী ডিমের দামও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তীব্র গরমে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণেই বাড়ছে ডিম ও মাংসের দাম।

রাজধানীর বাজারগুলোতে ডিম ও মুরগির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনপ্রতি বেড়েছে ১৫-৩০ টাকা; প্রকারভেদে মুরগির দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০-৫০ টাকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কারওয়ান বাজারের তুলনায় মিরপুরের বাজারগুলোতে ডিম ও মুরগির দাম বেশি বেড়েছে। কারওয়ান বাজারে বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ১২০ টাকা ছিল। এ ছাড়া সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা ডজন, যা এক সপ্তাহ আগে ১১৫ টাকা ছিল।

অন্যদিকে মিরপুরের বাজারগুলোতে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ, গত এক সপ্তাহে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৫-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ১৯০-২০০ টাকা ছিল। এ ছাড়া প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩৮০-৪০০ টাকা, লেয়ার ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে যথাক্রমে ৩৭০-৩৮০ টাকা ও ৩২০-৩৩০ টাকা ছিল।

অন্যদিকে মিরপুরের বাজারগুলোতে বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার ২২০ টাকা, সোনালি ৪২০ টাকা ও লেয়ার ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুরগি ও ডিমের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তাপপ্রবাহে মুরগি মারা যাওয়া, ডিম নষ্ট হওয়া ও সরবরাহের ঘাটতিকে দুষছেন বিক্রেতারা।

কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা আলমগীর বলেন, গরমের কারণে মুরগি মারা যাওয়ায় ডিমের উৎপাদন কম। তাছাড়া অনেক ডিম নষ্টও হয়েছে। এ কারণে বাজারে ডিমের সরবরাহ কম। ফলে দাম বাড়ছে।

মিরপুরের ডিম বিক্রেতা কবির বলেন, গতকালও (বুধবার) লাল ডিমের ডজন ছিল ১৪০ টাকা, আজ তা ১৫০ টাকা হয়েছে। আমরা যে দামে কিনে আনি, সে অনুযায়ী বিক্রি করি। দাম বাড়ার পেছনে আমাদের কোনো হাত নেই।

মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সবুজ মিয়া নামে এক বিক্রেতা বলেন, গরমের কারণে অনেক মুরগি মারা গেছে। এ কারণে বাজারে মুরগির ব্যাপক সংকট রয়েছে। তাই দাম বাড়ছে।

মিরপুরের মুরগি ব্যবসায়ী হারুন বলেন, মে মাস এমনই যাবে। সামনের মাসে কোরবানির ঈদ এলে তখন দাম কমবে।

ডিম ও মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা গরমকে দায়ী করলেও ক্রেতারা বলছেন সিন্ডিকেটের কথা। তাদের দাবি, এভাবে চলতে থাকলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের না খেয়ে থাকতে হবে।

জাবিদ হাসান ফাহিম নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, বাজারে তো সবকিছুরই দাম বাড়ছে। হঠাৎ করে ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় মোটেও আশ্চর্য হইনি। এমনই হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ে, কিন্তু বেতন বাড়ে না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হবে।

রুহুল আমিন নামে এক গাড়িচালক বলেন, এমনিতেই দুটির জায়গায় এখন একটি মুরগি কিনতে হয়। এক ডজন ডিমের জায়গায় এক হালি কিনতে হয়। তার ওপর দাম বাড়লে তো আমাদের কেনাই বন্ধ করে দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কয়দিন পর পর পণ্যের দাম বাড়ায়।

এদিকে ডিমের অবৈধ মজুতের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি প্রতিহত করতে রাজধানীর বাইরে নরসিংদীতে ডিমের কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের ধারণা, ব্যবসায়ীদের ডিম মজুত কার্যক্রম সন্দেহজনক এবং বাজার অস্থির করার পাঁয়তারা। মজুত করা ডিম দ্রুত খালাস করতে মজুতদারদের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংস্থাটি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...