ইসরায়েলি বাহিনীর টানা অভিযানে বিধ্বস্ত, তছনছ হয়ে যাওয়া গাজা উপত্যকা ও সেখানে বসরবাসরত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এবার সেই আন্দোলনে শামিল হলেন অস্ট্রেলিয়ার উচ্চশিক্ষার্থীরাও।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব সিডনি, ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন, ইউনিভার্সিটি অব ক্যানবেরাসহ বিভিন্ন শহরের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হচ্ছেন ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ-মিছিল হয়েছে। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচিতে শত শত মানুষের উপস্থিতি ছিল বলে জানা গেছে।
অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম এবং অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব সিডনির সংহতি সমাবেশ ও মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন ৩ শতাধিক মানুষ। এই অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনেক সাবেক শিক্ষার্থী এবং সাধারণ পেশাজীবীরাও ছিলেন।
সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কৃর্তৃপক্ষকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানান আন্দোলনকারীরা।
ইউনিভার্সিটি অব সিডনির সাবেক শিক্ষার্থী ম্যাট (৩৯) নিজের দুই বছর বয়সী শিশুপুত্রকে কাঁধে চাপিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে এসেছিলেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজের নামের শেষাংশ প্রকাশ করতে চাননি।
রয়টার্সকে ম্যাট বলেন, ‘এই সমাবেশকে শুধু তরুণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মনে করলে ভুল করা হবে। আপনার চারপাশে কী ঘটছে— তা যদি একবার আপনি উপলব্ধি করতে পারেন, তাহলে যা ঘটছে— সে সম্পর্কে জনসচেনতা সৃষ্টি এবং সংহিত জানানোর দায়িত্বও আপনার ওপর বর্তায়। আমি সেই দায়িত্ব পালন করতে এখানে এসেছি।’
এদিকে, ইউনিভার্সিটি অব সিডনির ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরা যেদিন যেদিন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন, সেই একই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ করেছেন ইসরায়েলপন্থি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাদের সমাবেশস্থল অবশ্য ফিলিস্তিনপন্থিদের সমাবেশের জায়গা থেকে বেশ কয়েক শ মিটার দূরে, ক্যাম্পাসের অপর প্রান্তে। সমাবেশে অস্ট্রেলিয়া ও ইসরায়েলের পতাকা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ইসরায়েলপন্থিরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক সারাহও ছিলেন তাদের মধ্যে।
নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজের নামের দ্বিতীয় অংশ প্রকাশে অনিচ্ছুক এই গবেষক রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়ে এই সমাবেশের ডাক দিয়েছি। (ফিলিস্তিনপন্থীদের জন্য) ক্যাম্পাসে এখন শান্তিতে হাঁটাচলার জায়গা নেই। যেখানেই যাচ্ছি, সেখানেই ‘ইন্তিফাদা’ ‘নদী থেকে সাগর পর্যন্ত’ ইত্যাদি স্লোগান কানে আসছে। এটা ভয়ঙ্কর।’
গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন শুরু হয় গত মার্চের শেষ দিক থেকে। নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রথম আন্দোলনে নেমেছিলেন, পরে তা দেশটির অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
সার্বক্ষণিক আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার জন্য ক্যাম্পাসে অস্থায়ী তাঁবু খাটিয়ে বসবাস করছিলেন শিক্ষার্থীরা। কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চলার পর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের আবাসস্থল তছনছ করে দেয় পুলিশ। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও শুরু হয় পুলিশি অভিযান।
মার্কিন বার্তাসংস্থা এপির হিসেব অনুযায়ী, ১৮ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মোট ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৬ বার অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সেসব অভিযান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ২০০ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের।
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে সারাক্ষণ অবস্থানের জন্য তাঁবু স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে পুলিশ প্রহরা বসানোরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব সিডনির উপাচার্য মার্ক স্কট বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিকদের এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কাছে আমরা প্রত্যাশা করছি যে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকবে এবং কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।’
সূত্র : রয়টার্স