মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে নিজ দলের সমর্থকদের কাছ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অব্যাহত চাপে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দলের অসংখ্য কর্মকর্তা, আইন প্রণেতা ও কৌশলবিদ তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ডেমোক্র্যাটদের বিজয় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে পারে– এমন উদ্বেগ রয়েছে তাদের মধ্যে। তবে সব উদ্বেগ-আশঙ্কা নাকচ করে দিলেন বাইডেন। দলের প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট সদস্যদের কাছে লেখা এক চিঠিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের কথা দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি। চিঠিতে লিখেছেন, নানা মহলের জল্পনা সত্ত্বেও আপনাদের জানাতে চাই, ‘আমি নির্বাচনে লড়বই। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে ৮১ বছর বয়সী বাইডেন আরও লিখেছেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির কনভেনশনের আগে আমাদের হাতে সময় আছে ৪২ দিন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সময় আছে ১১৯ দিন। এখন আমাদের সংকল্পে দুর্বলতা থাকলে তা সাহায্য করবে ট্রাম্পকে। এখন এসব আলোচনা বন্ধ করার সময় এসেছে। আমাদের সামনে এখন একটাই কাজ, তা হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করা।
রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে বিতর্কে বাজে পারফরম্যান্সের পর বাইডেন টেলিভিশনে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তাতে দলীয় নেতাকর্মীর মন গলেনি বরং তাঁকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে। এ সপ্তাহটি বাইডেনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী মঙ্গলবার প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের প্রথম অধিবেশন শুরু হচ্ছে। নিজের প্রার্থিতা নিয়ে এমন উদ্বেগের মধ্যে চলতি সপ্তাহে ৫০ জনের বেশি ডেমোক্র্যাটের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাইডেন। তবুও সমর্থক, ডেমোক্র্যাট নেতা ও অর্থদাতাদের উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।
তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে দলের একাধিক নেতা বলেন, প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে তাঁর ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলছেন এবং অন্য প্রার্থীদের হুমকির মধ্যে রয়েছেন। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের জন্য এমন একটি সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি করেছে, যেখানে তিনি জোর দিয়ে পুনর্নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি স্কট পিটার্স এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এবারের নির্বাচনী দৌড়ে জয়ী হওয়ার বিষয়ে আমার আত্মবিশ্বাস কম এবং কম। যদি আমরা বুঝতেই পারছি যে, আমরা হারতে যাচ্ছি, তাহলে অন্য কাউকে প্রার্থী না করাটা বোকামি হবে।
মিনেসোটার ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি অ্যাঞ্জি ক্রেইগ শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, বাইডেনকে ডেমোক্রেটিক মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সরে যাওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করেছিলোম। আমি বিশ্বাস করি না যে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যকরভাবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে এবং জয়ী হতে পারবেন তিনি।
এবারের নির্বাচন নিয়ে প্রচারণার শুরু থেকেই দলের ভেতরে-বাইরে বাইডেনের বয়স নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কিন্তু গত সপ্তাহে প্রথাগত এই বিতর্কের প্রথম রাউন্ডের পারফরম্যান্সের জন্য বাইডেনকে নিয়ে নতুন করে সমালোচনার ঝড় বইছে। সময় যত গড়াচ্ছে, উদ্বেগ তত বাড়ছে। দল ও সমর্থকদের মধ্যে নিজের বয়স ও প্রথম বিতর্কের পারফরম্যান্স নিয়ে উদ্বেগ দূর করার জন্য শুক্রবার রাতে বাইডেন এবিসি নিউজকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ২২ মিনিটের এই সাক্ষাৎকারে বেশির ভাগ সময় বাইডেনের বয়স নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাঁর বয়স দেশ পরিচালনায় কোনো বাধা তৈরি করবে না বলে বাইডেন জোর দিয়ে বলেছেন।
বিরল এই সাক্ষাৎকারে বাইডেন তাঁর বিতর্কের পারফরম্যান্সকে শুধু ‘একটি বাজে ঘটনা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, শুধু ‘সর্বশক্তিমান ঈশ্বর’ ছাড়া নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত থেকে তাঁকে কেউ সরাতে পারবে না।