

আগামী বছরের প্রাথমিকের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইগুলোয় সাতটি গদ্য ও পদ্য বাদ দেওয়া হচ্ছে। আর নতুন করে ৮টি গদ্য ও পদ্য যুক্ত হচ্ছে। এতে বাদ পড়েছে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ রাসেলকে নিয়ে লেখা। এর বদলে নতুন করে স্থান পাচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এনসিটিবি জানিয়েছে, গত বছর থেকে দেশে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়। চলতি বছর পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। আগামী বছর অবশিষ্ট শ্রেণিগুলোতে নতুন শিক্ষাক্রমের বই যাওয়ার কথা ছিল। তবে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যত বাতিল হয়ে যায়।
এরপর ২০১২ সালে প্রণয়ন করা পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই পরিমার্জনের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে বই ছাপানোর উপযোগী করা হয়েছে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে‘মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়’ অধ্যায়ের নাম পরিবর্তন করে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ করা হয়েছে। সেখানে শুরুতেই ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। সেটি বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন একটি দৃশ্যের ছবি দেওয়া হয়েছে।
অধ্যায়ের শুরু হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ দিয়ে। তাকে জাতির পিতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। নতুন বইয়ে এসব বাদ পড়েছে। এই অধ্যায় শুরু করা হয়েছে ২৫ মার্চের ঘটনা দিয়ে। এই অধ্যায়ের শব্দার্থে বঙ্গবন্ধু বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নোত্তর অংশে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে দুটি প্রশ্ন ছিল। সেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর লেখা ‘সোনার ছেলে’ বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে কাজী নজরুল ইসলামের ওপর লেখা ‘দুখু মিয়ার জীবন’ যোগ করা হয়েছে। ‘পহেলা বৈশাখ’ শীর্ষক গদ্যের নাম পরিবর্তন করে ‘নববর্ষ’ রাখা হয়েছে। বইয়ের ২৪ নম্বর পৃষ্ঠায় পদ্মা সেতুর একটি ছবি পরিবর্তন করা হয়েছে। নববর্ষ অধ্যায়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার ছবি বাদ দিয়ে সেখানে নববর্ষের অন্য ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
তৃতীয় শ্রেণির বই থেকে বাদ যাচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গদ্য ‘সেই সাহসী ছেলে’। বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে ‘আমাদের জাতির পিতা’ বাদ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে যাচ্ছে জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে লেখা ‘আমাদের চার নেতা’। ইংরেজি বইয়ের শেষ অধ্যায়ে শেখ রাসেলকে নিয়ে লেখা গদ্য ‘অ্যা ওয়ান্ডারফুল বয়’ বাদ যাচ্ছে।
চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বই থেকে বাদ যাচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে মমতাজউদ্দিনের লেখা ‘বাংলার খোকা’ এবং নির্মলেন্দু গুণের লেখা কবিতা ‘মুজিব মানে মুক্তি’। যোগ হচ্ছে ‘টুনুর কথা’ ও রজনীকান্ত সেনের কবিতা ‘স্বাধীনতার সুখ’।
বইয়ের পনেরো নম্বর অধ্যায়ে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান অংশে ‘বঙ্গবন্ধু’র পরিবর্তে ‘মওলানা ভাসানী’র নাম যাবে। ৭৯ নম্বর পৃষ্ঠায় কে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন? অংশটুকু সংযোজন হবে।
পঞ্চম শ্রেণির বই এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। সেখানে নতুন করে স্থান পাচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু। এর বাইরে সূচিতে তেমন কোনো সংযোজন-বিয়োজন নেই।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, আগামী বছরের বইতে অতিবন্দনা, অতিকথন বাদ দেওয়া হয়েছে। সে কারণে বইতে কিছু পরিবর্তন এসেছে। এ ছাড়া আগে যাদের অবদান বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, এমন অনেকের তথ্য যুক্ত হচ্ছে। বয়স উপযোগী করে অনেক লেখা সহজবোধ্য করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে নতুন পরিস্থিতিতে এগুলো যোগ করা হয়েছে। বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি যুক্ত করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আগামী বছর প্রায় ৪০ কোটির বেশি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। আগামী জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যের এসব পাঠ্যবই হাতে পাবে শিক্ষার্থীরা। তবে বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন পাঠ্যবই দেওয়া এখনো নিশ্চিত নয়।