বরগুনা জেলার চরগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা। এগুলো পর্যটন এলাকা হিসেবে অপার সম্ভাবনাময়। জেলার তালতলী উপজেলার নলবুনিয়ার চরটির নাম শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত পিকনিক ¯পট। প্রতিদিন শত শত পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয় এ পর্যটন স্পটটি। বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন পায়রা নদীর মোহনায় চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে বিশাল ঝাউবন। এ ঝাউবনের পাশে সাগরের চরে গড়ে তোলা হয়েছে শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত পিকনিক ¯পট।
শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত পিকনিক ¯পটের দৃশ্যাবলী দেখতে ও ঘুরতে ঘুরতে পর্যটকদের মন হারিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী আশার চরের শুটকি পল্লীতে। এ পল্লীতে হাজারো পরিবার শুঁটকি তৈরীর কাজে ব্যস্ত রয়েছে। এ স্থানে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা নৌ ও স্থল পথে আসছে। ঘুরতে ঘুরতে অপরূপ সৌন্দর্যের প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যায় দর্শনার্থীরা। আশারচরের সাথেই রয়েছে সোনাকাটা ইকোপার্ক। কুমির, হরিণসহ নানা জাতের বন্য জীবজন্তুর সাথে পাখ-পাখালি ও বৃক্ষরাজির নৈসর্গিক পরিবেশ মন ভুলিয়ে দেয়।
বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে, বরগুনার তালতলী উপকুলীয় বনবিভাগের আওতায় সিআরপিএআরপি প্রকল্পের নন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দযের লীলাভুমি নলবুনিয়ার চর। ২০০৬ সালে সিআরপিএআরপি প্রকল্পের অর্থায়নে ৫৮ হেক্টর জমিতে নন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল গড়ে তোলে বন বিভাগ। এ বনে ঝাউগাছ, আকাশমনি, অর্জুন, খইয়্যা বাবলা, মাউন্ট, কালি বাবলা, বাদাম, কড়াই ও খয়েরসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষা দশ কিলোমিটার নলবুনিয়া বনাঞ্চল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর অপরূপ লীলাভুমি। এ বনাঞ্চলের সাগর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ ও মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। সাগরপাড়ে সবুজের সমারোহ, বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও পাখির কলতান মুখরিত বনাঞ্চল নলবুনিয়ার চর।
গভীর অরণ্যের বুকচিরে এসব নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে দেখতে চোখে পড়বে সাগরের বিশালতা। বন বিভাগের বাহারী গাছের সমাহারে প্রকৃতি লীলা ভুমি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। স্থানীয় ফরেষ্টার আ মোতালেব জানান, এখানে শতশত পর্যটক আসেন। বিভিন্ন কলেজ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফর ও বনভোজনে আসা ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও সূধীজনের পদচারণায় মূখরিত হয় নলবুনিয়া। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য বনবিভাগ সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকে লীলাভূমি বরগুনার পাথরঘাটার লালদিয়া চর। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ উপকূলে এর অবস্থান। ভ্রমণ বিলাসীদের জন্য অনন্য প্রাকৃতির মনোরম পরিবেশে আবহমান বাংলার অপরুপ সৌন্দর্যর লীলাভুমি। এক দিকে সুন্দরবন আর অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ডেউ। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সূযোগ রয়েছে সাগর উপকূলীয় বরগুনার লালদিয়ার চরে। এখানকার বনে বাঘ, হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী সহজেই পর্যটকদের মনে দোলা দেয়।এছাড়াও লাল কাঁকরা চরের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক গুনে। চরের বালুতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেই গর্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে শুরু করে লাল কাঁকড়ার ঝাঁক । মানুষের টের পেলেই মূহুর্তে গর্তে চলে যায়। কুয়াকাটায় ও হরিণঘাটা ইকো পর্কে ঘুরতে আসা পর্যটকরা প্রায়ই ট্রলারযোগে এখানে আসেন।
লালদিয়ার চরের পাশেই হরিণঘাটা ইকোপার্কটি পর্যটন সুবিধা নিয়ে পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে। এখানে পর্যটকদের জন্য বনের মধ্যে নির্মিত হয়েছে সেতু আকৃতির দীর্ঘ ওয়াকওয়ে। ওয়াচ টাওয়ার, টয়লেট, বিশ্রামাগার। বরগুনা শহরের কাছে পিঠেই বিষখালী নদীতে আরও রয়েছে সাবেক সাংসদ মরহুম গোলাম সবুর টুলুর নামে আরেকটি চর। বন বিভাগ জানায়, তারা সেখানে বনবিভাগ হরিণসহ নানা জাতের প্রাণি ছেড়েছে। নানা জাতের গাছ লাগিয়েছে। এছাড়াও পায়রা ও বিষখালী নদীতে মাঝেরচর নামে আরও দুটি চরে জনবসতি রয়েছে। একেবারেই সাদামাটা আবহমান বাংলার সৌন্দর্যেভরা এ চরেও পর্যটকরা ঘুরতে যান।
বরগুনার জেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির জানিয়েছেন, যথা সম্ভব ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ আধুনিক পর্যটন হোটেল তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা গেলে চরগুলো পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। দেশের অন্যান্য পর্যটন স্টপগুলোর সাথে সৌন্দর্যে আমাদের চরগুলো প্রতিযোগিতায় নামতে পারে। খবর বাসস।