মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত আরও ৫ চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬টি মোবাইল ফোন, ২টি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (২১ আগষ্ট) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন,গত ১৩ আগস্ট মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত ৭ ডাক্তারসহ প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার টিম। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৮জন দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেওয়া বিপুলসংখ্যক ব্যাংকের চেক এবং অ্যাডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়রি উদ্ধার করা হয়। যেখানে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা তার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম পাওয়া যায়।
সিআইডি জানায়, এরই ধারাবাহিকতায় খুলনার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে মেডিক্যাল প্রশ্নফাঁস চক্রের অন্যতম হোতাসহ আরও ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন- খুলনা শহরের মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার ‘থ্রি ডক্টরস’ এর মালিক ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম (৪০), ডা. লুইস সৌরভ সরকার (৩০), ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া (২৫), ডা. শর্মিষ্ঠা মণ্ডল (২৬) ও ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা (২৪)। ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খান তারিম খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার। খুলনা শহরের আলোচিত মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসের মালিক। ডাক্তারি পেশা বাদ দিয়ে জড়ান কোচিং ব্যবসায়। প্রতিষ্ঠা করেন থ্রি ডক্টরস কোচিং খুলনা। তিনি নিজেকে ডাক্তার তৈরির কারিগর হিসেবে পরিচয় দেন। মেডিক্যাল প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করেছেন। মেডিক্যাল প্রশ্নফাঁসের গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য শত শত শিক্ষার্থীকে এভাবে ভর্তি করিয়ে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার এবং তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে। হাসপাতাল, ফ্ল্যাট, জমি, মাছের ঘের, হোটেল শেয়ারসহ গড়েছেন বিপুল সম্পদ। তারিমের বিরুদ্ধে একাধিক গোয়েন্দ প্রতিবেদনের আগেও প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে।
ডা. লুইস সৌরভ সরকার খুলনা মেডিক্যাল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। খুলনা শহরের আলোচিত মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসের শিক্ষক। বর্তমানে একটি বেসরকারি এনজিওতে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত। ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান অর্জন করেন। তিনি খুলনা থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক তারিমের স্পেশাল ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়াও তাকে বাসায়ও পড়াতেন তারিম। কম মেধাবী হওয়ার পরও তারিমের কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়ে তিনি মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন। তারিমের ঘনিষ্ঠজন ও তৎকালীন কোচিংয়ের ৩জন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। জাতীয় মেধায় ১১তম হওয়ার পরও সে ৪টি ফাইনাল প্রফেশনাল এক্সামিনেশনের সব সাবজেক্টেই ফেল করেছে। পরবর্তীতে একাধিকবার চেষ্টায় সে পাস করেছে। লামিয়ার প্রশ্ন পেয়ে চান্স পাওয়ার বিষয়টি খুলনার চিকিৎসক মহলে ওপেন সিক্রেট। লামিয়ার ভর্তি জন্য তার স্বামী শেখ ওসমান গনি ও ডা. তারিমের মাঝে প্রায় ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানা যায়। এ ছাড়া ডা. শর্মিষ্ঠা মণ্ডল ও ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা উভয়েই ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খান তারিম (মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরস এর মালিক) এর কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র ক্রয় করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়।