দেশে প্রায় দুই বছর ধরে চলছে ডলার সংকট। রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠালেই আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। আর ব্যাংক চাইলে আরও আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্সের ডলার কিনতে পারে। সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে প্রবাসীরা ১৯৩ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, সমাপ্ত নভেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৩ কোটি ডলার। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৭২ কোটি ৬৬ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৯ লাখ মার্কিন ডলার।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সংকট কাটাতে লোকসান দিয়ে বেশি দামে ডলার কিনছে ব্যাংকগুলো। প্রবাসী আয়ে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে ব্যাংকগুলো বাড়তি ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি দামে ডলার কিনতে পারছে। এখন বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স আসলে মোট ৫ শতাংশ প্রণোদনা মিলছে। ফলে প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারের বিপরীতে এখন পাওয়া যাচ্ছে ১১৫ টাকার মতো।
এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাসে রেমিট্যান্স এসেছিলো ১৯৭ কোটি ডলার। এরপর টানা দুই মাস প্রবাসী আয় কমেছিলো। ডলার সংকটের কারণে গত আগস্ট মাসে এসেছিলো ১৬০ কোটি ডলার। আর সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয়ে বড় হোঁচট খায়। ওই মাসে গত সাড়ে ৩ বছর বা ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় আসে বাংলাদেশে, যা পরিমাণে ১৩৪ কোটি ডলার। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ১০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এরপর অক্টোবর মাসে এসেছিলো ১৯৭ কোটি ডলার।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশে ডলার সংকট দেখা দেয়। সেই থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার-সংকট থাকায় জ্বালানি ও নিত্যপণ্য আমদানি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৫ মাসে রিজার্ভ থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এতে ৬ মাসে রিজার্ভ কমেছে ৬ বিলিয়নের বেশি। অর্থাৎ প্রতিমাসে গড়ে রিজার্ভ থেকে কমছে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।
গত অর্থবছরের শুরুর দিকে দেশে ডলারের সংকট দেখা দিলে আমদানিতে কড়াকড়ি শর্ত আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময় নিত্যপণ্য বাদে বিলাসী পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন দেওয়া হয়। এতে এলসি নিষ্পত্তি ও পরিশোধ কমে যায়।