সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪

দক্ষিণ এশিয়ার বিজনেস হাব হিসেবে গড়ে ওঠা কক্সবাজারের মহেশখালীতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং চ্যানেলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে মাতারবাড়ীতে তিনি এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

এর আগে, দুপুরে কক্সবাজারে আইকনিক রেলস্টেশন ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের উদ্বোধন করে ট্রেনে করে রামুতে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের টাউনশিপ মাঠে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় পৌঁছান তিনি। সেখানে ১৪টি সমাপ্ত প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও এই সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন করেন।

এদিন প্রধানমন্ত্রী আরও যেসব প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তার মধ্যে আছে- কক্সবাজার বিমান বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাঁকখালী নদীর উপর সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ, ২১২ একর ভূমি ভরাট, ৪ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার স্লোপ প্রটেকশন বাঁধ নির্মাণ, সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ডিজাইন ও স্থাপনাকরণ প্রকল্প এবং গোরকঘাটা-শাপলাপুর সড়ক প্রশস্তকরণ।

পাশাপাশি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তকরণ প্রকল্পও উদ্বোধন করেন তিনি।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নির্মাণ প্রকল্পটিও আছে উদ্বোধনের তালিকায়।

এ ছাড়া, কৈয়ারবিল থেকে চৌকিদারপাড়া পর্যন্ত সিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, বীর মুক্তিযোদ্ধা পৌর বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ এবং জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ইউনুছখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, রত্না পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এবং মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়।

টেকনাফ উপজেলার মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার, রামুর জোয়ারিনালা ইউনিয়নের মহসীনা বাজার ভায়া নন্দখালী সড়কে আর্চ ও আরসিসি গার্ডার ব্রিজ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সমুদ্রপথে মাতারবাড়ী দূরত্ব ৩৪ নটিক্যাল মাইল। কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে মাতারবাড়ী ধলঘাট পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। সাগর থেকে উপকূল পর্যন্ত পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাঁধ। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকায় চ্যানেলের পানি পুরো নীল। দেশের আর কোনও বন্দরে এমন নীল পানি নেই। নীল পানি থাকা মানে নৌপথের বড় অংশে পলি জমার আশঙ্কা কম।

ইতোমধ্যে বন্দরের নিরাপত্তায় উত্তর ও দক্ষিণদিকে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রের ঢেউ প্রতিরোধ বাঁধ। এ ছাড়া জেটি নির্মাণ, জাহাজ হ্যান্ডেলিং সরঞ্জাম সংগ্রহ ও টাগ বোট ক্রয়সহ তিনটি প্যাকেজে ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হবে।

মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ হলে অন্যান্য বন্দর থেকে এর দূরত্ব বেশি হবে না। পায়রা বন্দর থেকে মাতারবাড়ীর দূরত্ব ১৯০ নটিক্যাল মাইল ও মংলা বন্দর থেকে গভীর সমুদ্র বন্দরের দূরত্ব ২৪০ নটিক্যাল মাইল। তাই মাতারবাড়িতে মাদার ভেসেল (বৃহদাকার কনটেইনার জাহাজ) থেকে পণ্য খালাস করে অল্প সময়ের মধ্যে সড়ক ও সমুদ্রপথে অন্যান্য বন্দরে পরিবহন করা যাবে।

পুরোদমে মাতারবাড়ী বন্দর চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। গভীর সমুদ্র বন্দর জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ২ থেকে ৩ শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর দৃশ্যমান হয়ে গেছে। আগামী জুলাই নাগাদ জেটি ও কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এখানে বড় ধরনের ফিডার ভেসেল আসবে। অর্থ ও সময় বাঁচবে। অর্থনীতিতে সুপ্রভাব ফেলবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *