সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমুদ্র বিজয়ের ধারাবাহিকতায় ব্লু বন্ডের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিসহ সুনীল অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী করতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আর বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সমুদ্র সম্পদকে সুরক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে আদর্শ হলো ব্লু বন্ড। তাই বিএসইসি ব্লু বন্ডের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে ১৩ ও ১৪ মে দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত প্রথমবারের মতো এশিয়া-প্যাসিফিক ব্লু ইকোনমি ফোরামের সম্মেলনে প্যানেল আলোচনায় এসব কথা বলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

এশিয়া-প্যাসিফিক ব্লু ইকোনমি ফোরাম, জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং মালদ্বীপের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সম্মেলনটির আয়োজন করে। আর এ কাজে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশননেতৃত্ব দিচ্ছে।

এশিয়া-প্যাসিফিক ব্লু ইকোনমি ফোরাম আয়োজিত সমুদ্র অর্থনীতির মূল বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতে ১৫টি দেশের সরকারি মন্ত্রণালয়, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ সংস্থা এবং অনুশীলনকারীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে আলোচনায় অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম আরো বলেন, ব্লু বন্ডের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করতে কাজ করে যাচ্ছি। এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সমুদ্র অপরিহার্য। এমনকি বৈশ্বিক মাছের চাহিদা পূরণে ৮০ শতাংশ অবদান রাখে সুনীল অর্থনীতি। তবে বছরের পর বছর সম্পদ আহরণ ও পরিবেশ গত অবণতির জন্য সুনীল অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তাই সমুদ্র সম্পদের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্লু বন্ড নিয়ে কাজ করছি। এ ধরণের বন্ডের মাধ্যমে তহবিল সহজে পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া অলোচনায় ব্লু বন্ডের উদ্ভাবনী অর্থায়ন প্রক্রিয়া, স্থায়িত্ব বিবেচনা, সমুদ্র শাসনের পাশাপাশি ক্ষুদ্র দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর (এসআইডিএস) জন্য বিনিয়োগের সুযোগ সুবিধা তুলে ধরেন তিনি।

এদিকে সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সুনীল অর্থনীতির আকার এই দশক শেষে দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্রের পরিবেশ পুনরুদ্ধার, সামাজিক ন্যায্যতা এবং উপকূলীয় সম্প্রদায়ের জীবিকা নিরাপদ নিশ্চিত করতে সরকারি, বেসরকারি এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে এ খাতের বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ব্লু ইকোনমি কিছু উপকরণের মাধ্যমে প্রাইভেট ফাইন্যান্সকে আরও আকর্ষিত করবে। এতে মার্কেট রিটার্ন আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। তবে অন্যান্য উপকরণ বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করলেও মার্কেট রিটার্ন কম থাকবে, এমনকি এ খাতে ঋণ বৃদ্ধির প্রয়োজন হতে পারে। উপকরণের উদাহরণ হিসেবে তারা ব্লু বন্ডের অভিজ্ঞতা এবং মিশ্রিত অর্থায়নের উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন। সেশনটিতে সুনীল অর্থনীতির জন্য অর্থায়ন সুবিধা এবং স্থিতিশীল পরিবেশের কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সুনীল অর্থনীতি বা ব্লু-ইকোনমি হচ্ছে সমুদ্রের সম্পদনির্ভর অর্থনীতি। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ও এর তলদেশের বিভিন্ন প্রকার সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি। অর্থাৎ, সমুদ্র থেকে আহরণকৃত যে কোন সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়, তাই ব্লু -ইকোনমির বা সুনীল অর্থনীতির পর্যায়ে পড়বে। সমুদ্র পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। মৎস্যসম্পদের মাধ্যমে সমুদ্র খাবারের চাহিদা মেটায় এবং পণ্য পরিবহনের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুফল জনগণের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪ (Territorial Waters and Maritime Zones Act, l974) প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জাতিসংঘের সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল (International Tribunal for the Law of the Sea) কর্তৃক ২০১২ সালে মায়ানমারের সাথে এবং ২০১৪ সালের ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সমুদ্র বিজয়ের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ সুনীল প্রবৃদ্ধির অপার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির যুগে প্রবেশ করে।

বাংলাদেশের অর্জিত সমুদ্রসীমায় সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০১৪ সালের ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের অনুবৃত্তিক্রমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধি সমন্বয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব-কে আহবায়ক করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট “সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমন্বয় কমিটি” গঠন করা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশে সুনীল অর্থনীতির অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তরের কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীনে ব্লু ইকোনমি সেল গঠন করা হয়। ব্লু ইকোনমি সেল, ব্লু ইকোনমির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, দপ্তর সংস্থাসমূহের সাথে কাজ করে সমন্বয় সাধন করছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *