সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

ক্যানভাসে কোথাও ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় মুখ, কোথাও ১৫ আগস্টের শোকগাথা। আছে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালি জাতির জেগে ওঠার নানা দৃশ্য। রং-তুলির ছোঁয়ায় ক্যানভাসে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাসিমাখা মুখও। সব মিলে একেকটি ছবি যেন শিল্পীর জাদুকরী ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে জীবন্ত।

রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী আর্ট গ্যালারিতে এমনই সব দুর্দান্ত ছবি ও শিল্পকর্ম নিয়ে গতকাল শুক্রবার শুরু হয়েছে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের ‘এ রেট্রোস্পেক্টিভ ১৯৭৩-২০২৩’ প্রদর্শনী। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিখ্যাত শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ তাঁর চিত্রকলায় সংগ্রামী মানুষের প্রতিকৃতিতে দুর্দমনীয় শক্তি এবং অপ্রতিরোধ্য গতির ইঙ্গিতময় অভিব্যক্তির জন্য সুপরিচিত। সত্তর দশকের শুরুর দিকে দেশে বিমূর্ত চিত্রকলার যে দুর্বোধ্য পর্বের সূচনা হয়েছিল, তাতে গাঁটছড়া না বেঁধে শিল্পী শাহাবুদ্দিন নির্মাণ করেন এই স্বকীয় শৈলী। রং ও তুলির দ্বৈত ছোঁয়ায় ক্যানভাসে তিনি যেন নির্মাণ করেছেন বাংলাদেশের ইতিহাস এবং এ অঞ্চলের পরিশ্রমী স্বাধীনচেতা মানুষের শরীরী প্রকাশভঙ্গি।

আর্ট গ্যালারির প্রবেশপথে ঢুকতেই নজরে পড়বে শাহাবুদ্দিন আহমেদের নানা সময়ের আলোকচিত্র। ভেতরে প্রবেশ করলে বাম পাশের ১১৭×৭২ সেন্টিমিটারের প্রথম ছবিটি বঙ্গবন্ধুর। গ্যালারির বেশির ভাগ ছবি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। এতে আছে রিফিউজি, সলিডারিটি, মুভমেন্ট, জেগে ওঠা, রেমিনিসেন্ট অব লিবারেশন, ফ্রিডম ফাইটার, লিবারেশন, ৭ মার্চ, জয় বাংলা নামের পেইন্টিং। এ ছাড়া ভিক্টোরি, রান, লাইফ, হোপ, গান্ধী, বুল ফাইট, প্রকৃতি, ম্যাটাডোর, অপেক্ষা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বহুমাত্রিক শিল্পচিত্রও স্থান পেয়েছে গ্যালারিতে।

শিল্প সংগ্রাহক দুর্জয় রহমান বলেন, ‘শাহাবুদ্দিন আহমেদের এতগুলো ছবি স্বাধীনতার পরে আর একসঙ্গে কখনও প্রদর্শিত হয়নি। যদিও ১৯৭৩ দেওয়া আছে, তবে ১৯৬৯ সালে আঁকা একটি ছবি আমি দেখেছি। এই দীর্ঘ সময়ে আর্টের যে উন্নতি, বাংলাদেশে চিত্রকলার যে ইতিহাস, তার চিত্র এখানে বোঝা যাবে। শুধু শিল্পী বা এ অঙ্গনের জন্যই নয়, বাংলাদেশের বিষয়ে যাদের আগ্রহ আছে, তাদের এ প্রদর্শনী দেখা উচিত।’

বাংলাদেশ জন্মের প্রাক্কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত শিল্পের বেড়ে ওঠার চিত্র এ প্রদর্শনীতে অনুমেয় বলে মনে করেন লেখক ও সাংবাদিক আশফাকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সাধারণত শিল্পীর মৃত্যুর পর তাঁর রেট্রোস্পেক্টিভ আমরা দেখি। কিন্তু জীবিত অবস্থায় এটি দেখা সৌভাগ্যের। বিশেষত শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রগুলোতে প্রধানত তিনটি বিষয় বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও মানুষ। তবে সবার উপরে গতির বিকাশ এবং বৈচিত্র্য দারুণভাবে বোঝা যায়। তাঁর নির্মিত জলরঙ, তৈলচিত্র, ছাপচিত্র এখানে স্থান পেয়েছে। মোটকথা দীর্ঘ সময়ে শিল্পের একটি বেড়ে ওঠা এখানে দেখা যায়।’

রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের আর্টের শিক্ষক দিলীপ কুমার বলেন, শিল্পী শাহাবুদ্দিনের এত অসাধারণ ছবিগুলো একসঙ্গে দেখার অনুভূতি বর্ণনা করার মতো নয়। সব ছবির অর্থ অনেক গভীর এবং অন্তরে নাড়া দেয়।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *