অন্তরবর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও বিদ্যমান সংকট কাটিয়ে উঠতে নীতি সহায়তা চেয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
প্রথমবারের মতো বিএসইসিতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের আগমনে ফুলেল শুভেচ্ছায় স্বাগত জানানোর পাশাপাশি পুঁজিবাজার উন্নয়নে কমিশনের আপ্রাণ চেষ্টার বিষয়টিই তুলে ধরা হয়।
অর্থ উপদেষ্টাও বাংলাদেশের পুজিবাজারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীতকরণে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বিএসইসির পক্ষ থেকে তাঁর কাছে পুঁজিবাজার সংস্কার ও উন্নয়নে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘর্মেয়াদি নীতি সহায়তার বিষয়ে প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে বিএসইসি। তিনি বিষয়গুলোকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। এবং এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহনের পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেছেন। তিনি আরও বলেন, সমন্বিতভাবে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নীতি সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। যার মধ্যে কিছু থাকবে স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য, আর কিছু বিষয় মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
এর আগে বুধবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত বৈঠকে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান খন্দকার বাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, কমিশনার মো. আলী আকবর, কমিশনার ফারজানা লালারুখ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মহল এবং বিএসইসি’য় নির্বাহী পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সরকার কাজ করবে। এই প্রত্যাশায় আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পুঁজিবাজারে চলমান অস্থিরতা কাটিয়ে স্থিতিশীলতা ফেরাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজারে চলমান অস্থিরতার সকল দিক বিবেচনায় নিয়ে কমিশনের সাথে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পরিকল্পনা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে চাই না। সমস্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।
এদিকে বিকেলে কার্যালয়ে আগমন এবং দেশের পুঁজিবাজার ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সদয় দৃষ্টিদানের জন্য বিএসইসি’র চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ অর্থ উপদেষ্টাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি দেশের পুঁজিবাজারের বিদ্যমান অবস্থা সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়সমূহ তথ্য সহকারে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তুলে ধরেন। একইসাথে পুঁজিবাজারের বিদ্যমান সংকট নিরসনে পুজিবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বিএসইসি’র সদিচ্ছার কথা ব্যক্ত করেন। এসময় তিনি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সরকারের সদয় দৃষ্টি এবং নীতিসহায়তার অনুরোধ জানান।
বৈঠকে বিএসইসি’র একটি প্রেজেন্টেশন প্রদান করা হয়। এ সময় বিএসইসির সামগ্রিক কর্মকাণ্ড এবং পুঁজি উন্নয়নে সাম্প্রতিক সময়ে বিএসইসি কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সম্পর্কে মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়কে অবহিত করা হয়। একইসাথে বৈঠকে দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করে বাজারের সুযোগ – সম্ভাবনাকে কাজে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়াও বৈঠকে পুজিবাজারে ক্যাপিটাল গেইনের উপর আরোপিত যৌক্তিককরণ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্কার আনয়ন, প্রাইভেট ও পাবলিক কোম্পানির ক্ষেত্রে কর হারে পার্থক্য যৌক্তিককরণ, আ প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহের মাধ্যমে আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়াতে সরকারি মাটি কোম্পানিসমূহকে সরাসরি তালিকাভুক্তি বা আইপিও এর মাধ্যমে এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় উলে বাংলাদেশে ব্যবসারত বৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানিসমূহ এর পুজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, অর্থায়নের জন্য একটি নিদিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে কোন কোম্পানিকে পরবর্তী অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে অর্থায় আবশ্যিকভাবে পুঁজিবাজার হতে উক্ত অর্থায়নের একটি নির্দিষ্ট অংশ অর্থায়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নে নিদে আইনগত পর্যালোচনা করে পুঁজিবাজারে অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে হওয়া আর্থিক দত্ত থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিদে সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে বিএসইসি ইনভেস্টর প্রটেকশন ফান্ড তৈরি করা এবং পুঁজিবাজারে বিদ্যম ইকুইটি সংক্রান্ত সমস্যার কার্যকর সমাধান ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের সহায়তা কামনা করা হয়।