বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) কাছে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কবাবদ সরকারের বকেয়া রাজস্বের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। বছরের পর বছর সভা ও চিঠি চালাচালি করেও ওই অর্থ আদায় করতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া রাজস্ব আদায় করতে না পেরে নানা প্রশ্ন ও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আছে এনবিআর। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত পেট্রোবাংলার কাছে বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৫৮৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
বকেয়া রাজস্ব আদায় করতে পেট্রোবাংলার কাছে একের পর এক দাবিনামা পাঠাচ্ছে এবং অর্থ পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়ে যাচ্ছে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)। কিন্তু কোনোভাবেই তা আদায় হচ্ছে না। পেট্রোবাংলা বারবার বলছে, তহবিলে টাকা নেই। তারা বলছে, বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অ্যাডজাস্ট করা হোক।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, পেট্রোবাংলার ব্যাংক হিসাবে একসময় বড় অঙ্কের অর্থ স্থিতি অবস্থায় ছিল। তারা যদি তখন যথাযথ উদ্যোগ নিত, তাহলে আজ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। একসময় তারা বিপুল অঙ্কের টাকা মুনাফাও করেছে। কিন্তু বকেয়া পরিশোধ করেনি। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাহায্য নিয়েও রাজস্ব পরিশোধের একটি উপায় বের করতে পারত প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বারবার তাগাদা দিয়েও তাদের কাছ থেকে ফলপ্রসূ সাড়া পায়নি এনবিআর। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও এনবিআরের বকেয়ার তালিকায় পেট্রোবাংলা এক নম্বরে আছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বকেয়া আদায়ের জন্য ২০২২ সালের জুন মাসে পেট্রোবাংলার ব্যাংক হিসাব অপরিচালনযোগ্য করা হয়। তখন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বকেয়া পরিশোধসহ পরবর্তী কর মেয়াদ হতে নিয়মিত ভ্যাট জমার প্রতিশ্রুতি প্রদান করায় ব্যাংক হিসাব পরিচালনযোগ্য করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রতিশ্রুতি রাখেনি।
সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পেট্রোবাংলার বকেয়ার বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়। প্রয়োজনে তাদের ব্যাংক হিসাব মনিটরিং করে হলেও অর্থ আদায়ে চাপ প্রয়োগ করার তাগিদ দেওয়া হয়। আর বকেয়া ভ্যাট আদায়ে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট থেকে পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষকে আবারও চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পেট্রোবাংলা কয়েক বছর ধরেই দাবি করে আসছে তাদের ব্যাংক হিসাবে কোনো সঞ্চয়ী টাকা নেই। যদিও ২০২০-২১ অর্থবছরে পেট্রোবাংলার বিভিন্ন তহবিলে স্থিতি ছিল ১৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
২০২২ সালের জুন মাসে পেট্রোবাংলার ব্যাংকে জমা করা টাকার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে এনবিআরের পক্ষ থেকে চিঠি দেয় বৃহৎ করদাতা ইউনিট-ভ্যাট।
ওই চিঠিতে বলা হয়- ‘পেট্রোবাংলার ২০১৯-২০ অর্থবছরের সিএ ফার্ম কর্তৃক সম্পাদিত বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উক্ত অডিট রিপোর্টের পাতা-২০ অনুযায়ী ৩৯টি এসটিডি ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে প্রায় ১০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা স্থিতি রয়েছে। পৃষ্ঠার ২৫-৩২ অনুযায়ী ৩৮২টি এফডিআর ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে প্রায় সাত হাজার ১১১ কোটি টাকা পেট্রোবাংলার ব্যাংক হিসাবে স্থিতি রয়েছে। এছাড়া অডিট রিপোর্টের পাতা-২২ অনুযায়ী শুল্ক ও ভ্যাটের হিসাবে সুদবাবদ ৩ কোটি টাকা আয় প্রদর্শিত আছে। পেট্রোবাংলা শুল্ক ও ভ্যাট খাতের টাকা যথাসময়ে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান না করে উক্ত অর্থ এফডিআর ও এসটিডি লগ্নি করে তার ওপর সুদ হিসাবে আয় করছে। কিন্তু মূসকের পাওনা জমা প্রদান করছে না। অথচ আর্থিক সংস্থান না থাকায় বকেয়া মূসক পরিশোধ করা হচ্ছে না বলে বিভিন্ন সময়ে ভ্যাট বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। যদিও সিএ ফার্ম কর্তৃক সম্পাদিত বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ অনুযায়ী পেট্রোবাংলার সরকারি নিরঙ্কুশ বকেয়া রাজস্ব পরিশোধের সক্ষমতা রয়েছে। তারপরও বকেয়া মূসক পরিশোধ না করা অনভিপ্রেত।’