পুলিশ সব সময় মানুষের পাশে আছে। যে কোনো দুর্যোগেই পুলিশ পাশে থাকে। পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগেও পুলিশ ভূমিকা রাখে। মানুষের জানমাল বাঁচাবার জন্য নিজের জীবনকেও উৎসর্গ করে। যেকোনো ঝুঁকি নিতে পিছপা হয় না। এটাই হচ্ছে পুলিশের বড় কাজ যা পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ উপলক্ষ্যে আজ (মঙ্গলবার) রাজারবাগ পুলিশ প্যারেড মাঠে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তাণ্ডব-অগ্নিসন্ত্রাসের ফলে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল। ৫০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করে অগ্নি সন্ত্রাসের কারণে, যেখানে ২৯ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয় দগ্ধ হয়ে, আহত হয় আরও অনেকে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই বিএনপি, জামায়াত-শিবিররা যেভাবে হত্যা করেছে প্রকাশ্যে দিবালোকে, এভাবে পুলিশের গায়ে কখনো কেউ হাত দেয়! তা কখনো দেখা যায় না। যদিও তা বাংলাদেশে ঘটেছে। এছাড়া সাড়ে ৩ হাজার বাস-ট্রাক, ১৯টি ট্রেন, ১১টি লঞ্চ পুড়িয়ে ধ্বংস করে। ৭০টি সরকারি ও ৬ ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়। সে সময় পুলিশের সদস্যরা জীবন বাজি রেখে এই রকম ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে রুখে দিয়ে জনগণের নিরাপত্তা দিয়েছেন। দুর্ভাগ্য হলো, অনেক পুলিশ সদস্য আগুনে দগ্ধ হয়ে বেঁচে আছেন, কিন্তু কারো চেহারা এতো বিকৃত হয়েছে যে তারা মানুষের সামনে যেতে পারেন না। বাংলাদেশে এ ধরনের অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা যেন আর না ঘটে।
আমি ধন্যবাদ জানাবো পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যারা সে সময় জনগণের সাথে থেকে প্রতিরোধ গড়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাস বৈশ্বিক সমস্যা। হলি আর্টিজান ঘটনার সময় পুলিশ সদস্যরা যে যেই অবস্থায় ছিলেন, ছুটে গিয়েছিলেন। অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। দুজন জীবন দেন। আমরা তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আমরা জঙ্গির হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক, চোরাচালান, শিশুসহ মানবপাচার মোকাবিলায় পুলিশ যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে চলেছে। এর পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের পুলিশ অত্যন্ত বলিষ্ট ভূমিকা পালন করে চলেছে। বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য আজ পুলিশ বাহিনী, বিশেষ করে নারী কন্টিনজেন্ট ভূয়সী প্রশংসা পাচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে। এতে করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজার পাহাড়ি এলাকায় কয়েকজন ছাত্র হারিয়ে গিয়েছিল। ৯৯৯-এ ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পুলিশ উদ্ধার করে। ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্সসহ পুলিশের সেবা পাওয়া যাচ্ছে এই ৯৯৯ ব্যবহার করে। নারী, শিশু ও বয়স্ক-প্রতিবন্ধীদের জন্য সেবা প্রদান সহজ হয়েছে। প্রতিটি থানায় নারী-শিশু ও প্রতিবন্ধিবান্ধব ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। নারীবান্ধব বিভিন্ন অ্যাপস চালু করা হয়েছে, অনলাইন জিডিসহ বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপ জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় পুলিশকে জনগণের পুলিশ হিসেবে অভিহিত করতেন। জনগণের পুলিশ হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। আমি ধন্যবাদ জানাই, পুলিশ জনগণের পুলিশ হিসেবেই সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আগে মানুষ পুলিশকে ভয় পেতো। এখন মানুষকে পুলিশ সেবা দেয়, পাশে দাঁড়ায়। মানুষের আস্থা অর্জন করা যে কোনো বাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা পুলিশ জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে।