নভেম্বর ১৫, ২০২৪

পুঁজিবাজার বড় ধরণের অর্থায়নের সবচেয়ে উপযুক্ত ক্ষেত্র। সুনীল অর্থনীতির সফল প্রজেক্টের জন্য ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হলে বিএসইসি পরিবেশবান্ধব প্রজেক্টে অর্থায়নের সুযোগকে কাজে লাগাতে সব ধরণের সহযোগিতা করবে। সমুদ্র সম্পদকে ব্যবহার করে জিডিপিতে অবদান রাখতে সকলকে ব্লু বন্ড, গ্রীণ বন্ড নিয়ে ভাবার অনুরোধ জানান বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফ্রিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এবং নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

সুনীল অর্থনীতিতে সিঙ্গাপুরের উদাহরণ তুলে ধরে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতিতে বিনিয়োগে আগ্রহী। বিদেশী কোম্পানিগুলো দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে অংশগ্রহণ করতে চায়। আপনাদের গবেষণা করতে হবে কীভাবে সমুদ্রের সম্পদ ব্যবহার করা সম্ভব, কাজে লাগানো সম্ভব। সবকিছুর মধ্যেই সম্পদ রয়েছে, আমাদের খুঁজে বের করতে হবে সম্পদের মাঝে থাকা সম্ভাবনাকে এবং সেটাকে কাজে লাগাতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে অপার সম্ভবনাময় দেশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ ভূমির সমপরিমাণ সমুদ্র এলাকা পাওয়া সম্ভব হয়েছ। সুনীল অর্থনীতির জন্য বেসরকারি খাত ও পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক অর্থায়ন সারা পৃথিবীতে হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে সফল করার মাধ্যমে আইডিয়াকে কাজে লাগাতে পারলে সরকারের অর্থায়নের উপর নির্ভরতা কমে আসবে এবং বেসরকারি খাতে অর্থায়নের সুযোগ বহুগুণে বাড়বে। বড় ধরণের অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজার সবচেয়ে উপযুক্ত ক্ষেত্র। বাণিজ্যিকভাবে সফল প্রজেক্টের জন্য ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হলে বিএসইসি পরিবেশবান্ধব প্রজেক্টে অর্থায়নের সুযোগকে কাজে লাগাতে সব ধরণের সহযোগিতা করবে।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেক দেশে সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে অন্যতম বাধা হিসেবে দেখা যায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা রয়েছে সুনীল অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটানোর। সুনীল অর্থনীতির উন্নয়ন ও অর্থায়নে এই ক্ষেত্রটিতে প্রাইভেট সেক্টরের অন্তর্ভুক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং প্রাইভেট সেক্টরকে অন্তর্ভুক্তি না করতে পারলে শুধুমাত্র সরকারের উপর নির্ভর করে এই খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো সম্ভব হবে না।

তিনি আরও বলেন, দেশের ব্লু ইকোনমির উন্নয়নে প্রায় ২০ টি মন্ত্রণালয় জড়িত রয়েছে। উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হলে সকল পক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয়সাধন প্রয়োজন। বাংলাদেশে পলিসি ও আইনগত কার্যক্রম ইতোমধ্যে অনেকটা এগিয়েছে এবং বর্তমানে পলিসি অনুযায়ী বাস্তবায়ন প্রয়োজন। শুধু রপ্তানিকেন্দ্রিক না হয়ে দেশের ব্লু ইকোনমির উৎপাদনকে আরো নানা ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে।

বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব বন্ডের জন্য গাইডলাইনগুলো তৈরিতে বিএসইসি আইএফসির সাথে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

সেমিনারের সভাপতি অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশিদ ‘বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা এবং সুনীল অর্থনীতি উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনা’ শীর্ষক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনা প্রদান করেন। তিনি প্রেজেন্টেশনে সুনীল অর্থনীতি, বিভিন্ন অর্থনীতিতে ব্লু-ইকোনমির অবদান, সুনীল অর্থনীতির বৈশ্বিক অবস্থা, বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির অর্থনৈতিক মূল্য, সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রসমূহ, বাংলাদেশে উপকূল এলাকা ও সুনীল অর্থনীতি নিয়ে সরকারের গৃহীত জাতীয় পরিকল্পনা ও সুনীল অর্থনীতির কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফ্রিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম ও পদক্ষেপ, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সুনীল অর্থনীতি, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ এ সুনীল অর্থনীতি পরিকল্পনা ইত্যাদি উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে ‘ব্লু ইকোনমি: ফান্ডিং প্রসপেকটস অব ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বৈশ্বিক ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সুনীল অর্থনীতির নানাদিক তুলে ধরেন। বিশ্বজুড়ে সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্র এবং বাংলাদেশে তার সম্ভাবনাসমূহ তথ্য-উপাত্তসহকারে উপস্থাপন করেন তিনি। তিনি দেশের সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কীভাবে দেশের পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করা সম্ভব তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...